Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ঐক্য ও সংযম প্রয়োজন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 
১২ জুলাই ২০২৫ ২০:২৪

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ আয়োজিত সভায় বক্তারা।

ঢাকা: বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে নষ্ট না করে ঐক্য ও সংযম বজায় রাখতে হবে। নইলে দেশের মানুষের বৃহৎ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হবে। বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানই স্বৈরতন্ত্র তৈরি করে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মনস্তাত্বিক পরিবর্তনও জরুরি। দলগুলোকে মনে করতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। ক্ষমতা আকড়ে ধরে নিজের শাসনামলের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে নয়।

শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ছাত্র শ্রমিক জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি-বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ নামের একটি সংগঠন।

বিজ্ঞাপন

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ব্ক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের শাসন ছিল ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র। ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ধারা থেকে বের করে আনতে হবে।’

আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের আকাঙ্ক্ষা, জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা। এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির ঊর্ধ্বে থাকবে, তাকে (ব্যক্তিকে) নিয়ন্ত্রণ করবে। আমরা চাই, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হবে।’ সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ব্ক্তব্যের শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রতিনিধিত্ব করে এখানে কথা বলছি না। বক্তব্যগুলো আমার, দায়িত্বও আমার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলছি। এই লড়াই গত বছরের জুলাই থেকে শুধু নয়; গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ বলেছে, গণতান্ত্রিক অধিকার চাই। দেশের মানুষ কেবল গত ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন মোকাবিলা করেছে, তা নয়। বাংলাদেশে একসময় একদলীয় ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে মানুষ লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে।’

অধ্যাপক রীয়াজ মনে করেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, এমন সব প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, যা ব্যক্তির ঊর্ধ্বে উঠে ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্রের স্বার্থকে সামনে রেখে জাতিকে নেতৃত্ব দেবে।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আপনি পার্লামেন্ট তৈরি করবেন এ কারণে নয় যে ব্যক্তির বন্দনা হবে। আপনি পার্লামেন্ট এ কারণে তৈরি করবেন না যে নির্বাহী বিভাগের সব অত্যাচার–নিপীড়নকে রাবার স্ট্যাম্প দেবেন। আপনাকে তৈরি করতে হবে সেই পার্লামেন্ট, যেখানে শুধু ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য থাকবে না।’

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিরূপণ করা আইনসভার কাজ। আইনসভা থেকেই নির্বাহী বিভাগ তৈরি হচ্ছে পার্লামেন্টারি সিস্টেমে (সংসদীয় ব্যবস্থায়)। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না নজরদারির মধ্যে রাখতে পারবেন (ততক্ষণ গণন্ত্রের বিকাশ হবে না) এবং সেটা করবে কে, জনপ্রতিনিধিরা করবেন’, বলেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আপনার আমার ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি নির্বাহী বিভাগ নিযন্ত্রণ করবেন এটাই স্বাভাবিক, সেই প্রতিষ্ঠান আমাদের তৈরি করতে হবে। তা না হলে গণন্ত্রের বিকাশ হবে না।’

আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘যতটুকু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তা যথেষ্ট। বাকিটা জনগণের ওপর ছেড়ে দিন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল, বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, কিন্তু সরকার তা না করে আরও বিভক্তি তৈরি করেছে। জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেই সংস্কারের কথা সামনে আনা সম্ভব হয়। এই সরকার দেশের বাইরের মতামতের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে।’ কিন্তু যারা বিদেশে থাকে, তারা কিভাবে দেশের মানুষের মনের কথা বুঝবে বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সরকার কার্যকরভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন কাজে লাগাতে পারেনি বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ আর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।’ এই ঘটনা আওয়ামী জাহেলিয়াতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাইফুল হক আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশকে অনেকে ‘গনিমতের মাল’ মনে করছে।’ তিনি দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে মব সন্ত্রাস বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আর যা–ই করেন, আমাদের কর্মকাণ্ড যেন আওয়ামী জাহেলিয়াতকে অতিক্রম করে না যায়। যদি যায়, তাহলে আমরা বারবার রক্ত দেব, কিন্তু আমাদের কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য আকবর খান, আহত জুলাই যোদ্ধা ফায়েজুর রহমান মনির, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়কারী মাসুদ রানা ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুল মাজেদ আতাহারী, মাসুদ রানা, আকবর খান ও অ্যাডভোকেট ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।

সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবদুন নূর। আলোচনা সভার শুরুতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সারাবাংলা/একে/এইচআই

আলী রিয়াজ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদ রুমিন ফারহানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর