ঢাকা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের একমাত্র রক্ষাকবচ হলো নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার এবং প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের একটি রেস্টুরেন্টে ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান ‘প্রথমে আসলে প্রথম’ (এফপিটিপি) ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং একচেটিয়া ক্ষমতার পথ তৈরি করছে।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ ভুলনীতি ও অসুস্থ রাজনীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। আবু সাঈদ ও মুগ্ধদের আত্মত্যাগ যেন বিফলে না যায়, সেজন্য এখনই রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন দরকার। পিআর ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘২০০৮ সালে ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সংসদে ৭৭ শতাংশ আসন পেয়েছিল। আর বিএনপি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে মাত্র ১০ শতাংশ আসন পেয়েছে। এই ব্যবস্থায় সামান্য ভোট পার্থক্যে বিরাট আসন পার্থক্য তৈরি হয়, যা রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করে এবং একচেটিয়া ক্ষমতার সুযোগ দেয়।’
চরমোনাই পীর পিআর পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাস্তবসম্মত হয়। কারচুপির সুযোগ কমে যায় এবং সরকার গঠনে দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার প্রয়োজন তৈরি হয়। ফলে, সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।’
ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের কাজ এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত থাকায় সংসদে পিআর বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা নেই। তুরস্কের মতো বিভাগভিত্তিক পিআর পদ্ধতি গ্রহণ করলেই সমাধান সম্ভব।’
পিআর-নির্ভর ব্যবস্থায় সরকার অস্থির হবে—এমন ধারণা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘সরকার ঘনঘন পরিবর্তন হওয়া মানেই অস্থিরতা নয়। ইতালির উদাহরণ রয়েছে। বরং আমাদের দেশে দীর্ঘ মেয়াদে সরকার থাকার পরও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের গুণগত মান বাড়বে, জাতীয় ইস্যুতে মনোযোগ বাড়বে, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হবে এবং জোটভিত্তিক রাজনীতি হবে আদর্শনির্ভর।’
চরমোনাই পীর বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাই চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা রক্ষার একমাত্র পথ পিআর। নির্বাচন পদ্ধতির এই রূপান্তরই হবে সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের ভিত্তি।’
গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। জুলাই মাসের মধ্যেই আমরা জুলাই ডিক্লেয়ারেশন চাই।’ তিনি চরমোনাই পীরকে পিআরকে মুখ্য ইস্যু হিসেবে তোলায় ধন্যবাদ জানান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের, ইসলামি ঐক্যজোট, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ও শিক্ষাবিদরা।
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেএম বিল্লাল হোসেন ও ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ প্রমুখ।