যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন।
শনিবার (১২ জুলাই) গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইইউ’র জন্য এই শুল্কের ঘোষণা ছিল এক বড় ধাক্কা। কারণ ইউরোপীয় কমিশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা মাসখানেক ধরে একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছিলেন; যেখানে মাত্র ১০ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব ছিল। এই অপ্রত্যাশিত উচ্চ শুল্ক ইইউ’র বাণিজ্য চুক্তি এবং উত্তেজনা কমানোর আশাকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ফলে, বেলজিয়ান চকলেট, আইরিশ বাটার এবং ইতালীয় অলিভ অয়েলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে বাণিজ্য যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সোমবার (১৪ জুলাই) ইইউ’র বাণিজ্য মন্ত্রীরা একটি পূর্ব-নির্ধারিত সম্মেলনে মিলিত হবেন। কিছু দেশ থেকে তাদের ওপর কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য চাপ আসবে। ইইউ’র প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, ৩০ শতাংশ শুল্কের হার ‘আটলান্টিকের উভয় পাশের ব্যবসা, ভোক্তা এবং রোগীদের ক্ষতির কারণ হয়ে ট্রান্সআটলান্টিক সাপ্লাই চেইনকে ব্যাহত করবে।’
তিনি আরও জানান, তারা এখনো ট্রাম্পকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে রাজি করাতে আশাবাদী।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ‘সৎ উদ্দেশ্য… একটি ন্যায্য চুক্তিতে পৌঁছানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘আটলান্টিকের দুই প্রান্তের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার কোনো মানে হয় না।’
মেক্সিকোর নেতার কাছে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী এবং ফেনটানাইলের প্রবাহ বন্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তবে তিনি বলেছেন, উত্তর আমেরিকাকে একটি ‘নার্কো-ট্র্যাফিকিং প্লেগ্রাউন্ড’-এ পরিণত হওয়া থেকে থামাতে দেশটি যথেষ্ট কিছু করেনি।
ইইউ’কে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে বহু বছর আলোচনার পরেও ‘দীর্ঘমেয়াদী, বিশাল, এবং চলমান বাণিজ্য ঘাটতি’ রয়েছে, যা ইইউ’র শুল্ক এবং বাণিজ্য বাধা দ্বারা সৃষ্ট। তিনি সম্পর্ককে ‘পারস্পরিক’ নয় বলে অভিহিত করেছেন।
এই উচ্চতর শুল্ক হার ট্রাম্পের আলোচনার ক্ষেত্রে ‘সৎ বিশ্বাসে’ কাজ করার ক্ষমতাকে আবারও পরীক্ষা করবে। ব্রাসেলস এই সর্বশেষ হুমকিকে ট্রাম্পের একটি কৌশল হিসেবে দেখছে, যার মাধ্যমে তিনি ইইউ’র কাছ থেকে আরও ছাড় আদায় করতে চান।
সাবেক কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের পরিচালক ডগলাস হল্টজ-ইকিন বলেন, এই চিঠিগুলো প্রমাণ করে যে গত তিন মাস ধরে কোনো গুরুতর বাণিজ্য আলোচনা হয়নি। তার মতে, দেশগুলো বরং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল কীভাবে মার্কিন অর্থনীতি এবং ট্রাম্পের কাছে তাদের নিজেদের দুর্বলতা কমিয়ে আনা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প এই চিঠিগুলো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করছেন, তবে শেষ পর্যন্ত, এগুলো অন্যান্য দেশের প্রতি চিঠি যা তার নিজের নাগরিকদের ওপর কর আরোপ করতে চলেছে।’