Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ, বাড়ছে দুর্ঘটনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ জুলাই ২০২৫ ২২:৩৬

ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়কে বেহালদশা, বাড়ছে দুর্ঘটনা। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর: ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটি যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাস্তা জুড়ে ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ভরে যাওয়ায় বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মহসড়কটির অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। সড়কটি ভাঙাচুরা থাকায় ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করায় সময় লাগছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ।

শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সংস্কার কাজ শুরু করেছে। ইট, বালু, সুরকি ফেলে গর্তগুলো মেরামতের চেষ্টা করছেন তারা।

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের সদর উপজেলার মুন্সিবাজার থেকে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কটি সবচেয়ে বেহাল দশা। যার মধ্যে সদর উপজেলার বাখুন্ডা, নগরকান্দা উপজেলার মহিলা রোড, তালমা, শঙ্করপাশা এলাকায় বিভিন্ন অংশে রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বাকী পুরো রাস্তাতে ছোট গর্ত বড় আকার ধারণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

সড়কটিতে যাতায়াতকারী ইঞ্জি. মাহমুদুল হাসান খালিদ বলেন, দীর্ঘদিনেও সড়কটিতে বড় ধরনের কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মহাসড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় খানাখন্দে ভরে গেছে। যে কারণে গাড়ি চলাচলে চালক ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটতেছে। সংস্কারের নামে যে জোড়তালির কাজ চলছে তা বেশিদিন টিকবে না বলেও তার অভিযোগ। রাস্তাটি ৪ লেন করার জন্য ২ বছর আগে এই সড়কের দুই পাশের হাজার গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু এখনও ৪ লেন রাস্তার কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

অ্যাম্বুলেন্স চালক হৃদয় শেখ জানান, গতকাল ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে ফরিদপুরে রোগী নিয়ে এসেছিলাম। রাস্তার বেহালদশার কারণে রোগীদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্রুত সময়ে এই সড়ক দিয়ে রোগী নিয়ে হসপিটালে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। অনেক সময় রোগী অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায়। এছাড়া রাস্তা ভাঙ্গাচুড়া থাকায় অসুস্থ রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মাইক্রোবাস চালক আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এই সড়কটিতে অনেক গাড়ির চাপ বেড়েছে। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের বহু গাড়ি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। মহাসড়কটি অবস্থা খারাপ থাকায় গর্তের মধ্যে পড়ে ছোট বড় সব ধরনের গাড়িতে নানা রকম সমস্যা হয় ও অনবরত দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বৃষ্টির সময় গর্তগুলোতে পানি জমে থাকায় মরণ ফাঁদে পরিণত হয়।

এই সড়কে দুর্ঘটনার শিকার লরি চালক মো: ফরিদ জানান, বগুড়া থেকে কেমিক্যাল বোঝাই লরি নিয়ে বরিশাল যাওয়ার পথে ফরিদপুর-বরিশাল মহসড়কের মহিলা রোড এলাকায় এসে রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে গর্তে পড়ে লরির সামনের চাকার টাইনিং রড ছিড়ে রাস্তার উপর ভেঙে পড়ছে। এটি ঠিক করতেও সময় লাগবে আবার ৩০ হাজার টাকার মত ক্ষতি হলো। এই রাস্তা মেরামত না হওয়ায় যানবাহন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে মহসড়কটির বেহাল অবস্থার চিত্র প্রতিদিন সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরে নেতিবাচক মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। খারাপ রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ধানের চারা রোপন, মাছ ছেড়ে প্রতিকী প্রতিবাদ করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে যাচ্ছে অনেকে।

‘ভাঙা-ফরিদপুর ৪ লেন দ্রুত বাস্তবায়ন আন্দোলন’ কমিটির প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য শ্রাবণ হাসান জানান, দীর্র্ঘদিন যাবৎ ওই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটির বেহাল অবস্থা থাকায় “ভাঙা-ফরিদপুর ৪ লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে রোববার (১৩ জুলাই) বেলা ১১ টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল শ্রেনীপেশার মানুষকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন করার কথাও বলেন তিনি।

জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার জানান, ব্যস্ততম মহাসড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর গত মে মাসে আরবিএল কোম্পানিকে টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া কারণে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ইট, বালু, সুরকি ফেলে কিছু সংস্কার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া চার লেন প্রকল্পের জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়নি। জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শেষ হলেই মহাসড়কটির ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা গোল চত্বর পর্যন্ত চার লেনের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

সারাবাংলা/এসএস

দুর্ঘটনা ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক ফাঁদ মরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর