ঢাকা: ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কর্মকর্তারা সরকারের আস্থায় নেই’- বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির সংকট সমাধানে গঠিত ৫ সদস্যের উপদেষ্টা প্যানেলের প্রধান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বুধবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা সরকারের আস্থায় নেই। কারণ তারা অকল্পনীয় কাজ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের মতন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে, রাজস্ব সংগ্রহ ব্যাহত হয়েছে। এখন তাদের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, কনটেইনার জট কমানো ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে সরকারের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন অর্থনীতির ক্ষতি করেছে, রাজস্ব আহরণকে ব্যাহত করেছে। আমরা এখনও খবর পাচ্ছি যে, এনবিআর কর্মকর্তারা কার্যক্রমে “গো স্লো” পদ্ধতিতে এগোচ্ছেন। সেটি দেখতে আমরা মাঠ পর্যায়ে যাব।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বরাত তিনি দিয়ে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করেছেন। আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়া হয়েছে।’ এই রিপোর্টটির বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য অর্থ বিভাগ থেকে সুপারিশ করা হবে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, তবে এনবিআর থাকবে না। কারণ এনবিআর শুনলেই মানুষ একটু হাসি দেয়। এনবিআর না থাকাই ভালো।
এনবিআরের কর্মকর্তাদের অভয় দেওয়ার মতো কোন বার্তা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের অভয় দেওয়ার কিছু নাই। তারা শিশু না।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, গঠিত উপদেষ্টা কমিটির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে যে আন্দোলন হলো, এ সমস্যার সূত্রপাত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব। কিন্তু এটা তো আগে থেকেই ছিল, তাহলে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশের পরে সেটি কেন হলো?
তিনি বলেন, তখন আমরা দেখেছি যে, এ অধ্যাদেশে মৌলিক কিছু ত্রুটি রয়েছে। এটি প্রণয়নে চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যেমন সচিব হবেন কে, সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে—উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে সচিব করা যাবে। আবার অধ্যাদেশের ৭-এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণ-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু সেখানে বলা হয়নি কোন ধরনের রাজস্ব। সেটি কি ভূমি রাজস্ব? পাসপোর্টের রাজস্ব? কমিটি অধ্যাদেশের ত্রুটি সংশোধন ও অস্পষ্টতাগুলো দূর করার পরামর্শ দেবে। এনবিআরকে ভাগ করে যে দুটি বিভাগ করা হয়েছে, সেই দুটি বিভাগের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নীতিমালা করা, কোন ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে এই দুই বিভাগে নিয়োগ করা হবে- তা নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হবে।
ফাওজুল কবির খান জানান, ‘কমিটি এ পর্যন্ত আয়কর ও শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার কমিশনের সঙ্গে এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মোট পাঁচটি বৈঠক করেছে। এখন কমিটি মাঠ পর্যায়ে আয়কর ও শুল্ক-ভ্যাট কার্যক্রম পরিদর্শন করবে। কমিটি দেখবে যে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের আগের মাসগুলোতে কী ধরনের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে, আর এখন কী ধরনের রাজস্ব সংগ্রহ হচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিটির সঙ্গে আলোচনায় আয়কর ও শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তারা এনবিআরকে দুই ভাগ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। তবে তারা দাবি করেছেন যে, এই দুই বিভাগে শুধু তাদের ক্যাডার থেকে নিয়োগ করতে হবে। তবে তাদের যে দাবি, শুধু তাদের দুটি ক্যাডারের (শুল্ক ও আয়কর) কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা, সেটি রাখা হবে না; আবার এখানে যাতে প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারি না থাকে সেটিও নিশ্চিত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের কমিটি মনে করে, আয়কর ও শুল্ক-ভ্যাট এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়ে নতুন বিভাগ গঠন করা গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার প্রশাসন ক্যাডারের খবরদারিও গ্রহণযোগ্য হবে না। কমিটি দ্রুতই এ দুই বিভাগের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কারা হবেন, এর একটি নীতিমালা করার সুপারিশ করবে। সেই নীতিমালার আলোকে এখানে নিয়োগ হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাদের বলেছেন যে, কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বা ব্যবস্থা নিতে কেন সরকার এত দেরি করলো। সরকার গণতান্ত্রিক পন্থায় এগোতে চায়। যে কারণে সরকার অপরিসীম ধৈর্য ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কমিটিকে জানিয়েছে যে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনে পরিপ্রেক্ষিতে তারা অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারা এখনও এনবিআরের শুল্ক-ভ্যাট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। সর্বোপরি ব্যবসায়ীরা সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন করেন।
বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বক পরিস্থিতির কারণে দেশ মন্দার মুখে পড়তে পারে- এই কমিটি সেরকম কিছু মনে করে কি না- এমন এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের রিপোর্ট হয় আসলে পুরনো কিছু তথ্যের ভিত্তিতে। সেই সময় বাংলাদেশ পার করে এসেছে। আমি মনে করি, এখন এর উল্টোটাই ঘটবে। এখন ব্যাংকরাপ্টসি, মন্দা এগুলো আর ঘটবে না।