ঢাকা: নিবন্ধন স্থগিত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক বাতিল করে ‘শাপলা’ প্রতীক তালিকায় যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী।
এনসিপির প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’ ছাড়া বিকল্প কোনো অপশন নেই। প্রতীক হিসেবে শাপলা পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তাই শাপলা না পেলে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় নৌকা প্রতীক বাদ দিয়ে শাপলা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায় এনসিপি। সেই সঙ্গে এ সময় ইসি পুনঃগঠনের দাবিও জানান এনসিপি নেতারা।
এর আগে, ভোটের প্রতীক তালিকায় শাপলা না রাখার সিদ্ধান্তের মধ্যে রোববার (১৩ জুলাই) সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ১১টার দিকে এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ পাঁচ সদস্যর প্রতিনিধি বৈঠকে বসেন।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে ইসি পুনর্গঠন করতে হবে। এটা স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। আগের আইনটা পরিবর্তন করতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী ইসিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যারা ভালো কাজের পরিচয় দিয়েছে তাদের রাখা যেতে পারে। অনেকে তাদের ব্যক্তি জায়গা থেকে একটা দলের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে।”
এদিকে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফিংয়ে৷ এনসিপির অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মূসা বলেন, “আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকাবস্থায় নৌকা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। আমরা এ বিষয়টি ইসির নজরে এনেছি। আইনগতভাবে নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখতে পারে না ইসি।”
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপরই নিবন্ধন স্থগিত করে ইসি।
যতক্ষণ আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের অন্য কোনো সিদ্ধান্ত বা আদালতের কোনো নির্দেশনা না আসার পযন্ত নৌকা প্রতীক তালিকায় রাখা যাবে না বলে জানান তিনি।
প্রবাসী ভোটারদের ভোট পদ্ধতির অগ্রগতির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা করে এনসিপি প্রতিনিধি দল।
মূসা জানান, জাতীয় প্রতীক হচ্ছে ভাসমান শাপলা, ধানের শীষ তারা, পাটপাতা। চারটি উপাদানের মধ্যে ধানের শীষ এখন বিএনপির প্রতীক। তারকা একটি ও সোনালী আঁশ আরেকটি দলের প্রতীক। জাতীয় ফল কাঁঠালও একটি দলের রয়েছে।
“জাতীয় প্রতীক আসলে শাপলা নয়, এটাকে মিসব্রান্ডিং করা হচ্ছে। জাতীয় প্রতীক চারটি আলাদা আলাদা উপাদানের সমন্বয়ে একটি চিহ্ন।…রং, ব্যাসার্ধ সবই বিধিতে আছে।”
আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিল সংশোধনের দাবি জানায় এনসিপি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা নৌকার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি, তালিকার ভেতরে রাখা যাবে না। এটি করতে গেলে ইসিকে ওই তালিকায় সংযোজন বিয়োজন করতে হবে। সে জায়গায় আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে নতুন দরখাস্ত দিয়েছি- শাপলাকে তালিকাভূক্ত না করার বিষয়ে ইসি ভুল ব্যাখ্যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে, নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে শাপেলাকে রাখায় আইন কোনো বাধা নেই তা জানিয়েছি।”
আগামীতে এনসিপি নিবন্ধিত হলে যেন শাপলাই বরাদ্দ পায় সে বিষয়ে আবেদনও জানানো হয়।
“শাপলাকে তালিকাভূক্ত করার পাশাপাশি এনসিপি নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে তখন যেন শাপলা প্রতীক বরাদ্দ পায়। কমিশন সাধারণত দরখাস্ত গ্রহণ করে তা বিবেচনা করে থাকে।”
নির্বাচন কমিশন আইনমন্ত্রণালয়ে প্রতীক তালিকা পাঠানোর পর নতুন করে এনসিপি আবেদন করে এবার দলটি শাপলা পাবে বলে মনে করে এ এনসিপি নেতা।
“ইসি যখন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়; এরপরে প্রথম দল হিসেবে আমরা শাপলা চেয়ে আবেদন করি। এখন আমাদের অধিকার আগে, শাপলা আমরা পাব আশা করি।”
আইনি ব্যাখ্যার পর কমিশন বিবেচনা করবে বা আমাদের চেয়েও ভালো আইনি ব্যাখ্যা কমিশন কে দিতে হবে।
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম বলেন, এনসিপি ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘সিইসি ও ইসি নিয়োগে আইনের’ অধীনে এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশন গঠন হওয়ায় বরাবরই ইসি পুনর্গঠন দাবি করে আসছে।
জহিরুল ইসলাম আরো বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হয়েছিল তা আমরা সমর্থন করিনি। এখনও বর্তমান আছে। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ইসিসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ হয় এ নিয়েও প্রস্তাব রয়েছে।”
