ছেলের খোঁজে থানার গেটে রাতদিন মায়ের অপেক্ষা
২ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৩ | আপডেট: ২ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৮
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘বিকেল চারটার দিকে অচেনা ফোন নম্বর থেকে পোলাডা (ছেলে) আমারে ফোন দিয়া কইল মা আমাকে শাহবাগ থানার পুলিশ আটক করেছে। এ কথা শুনে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এরপর সন্ধ্যাটার দিকে ওর বাপসহ সবাই মিলে শাহবাগ থানায় আছি। কিন্তু এখানে এসে সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি কেউ পোলার খোঁজ দিতে পারেনি। গতকাল সারারাত এই গাছের নিচে বসে থেকেও ছেলের কোন খোঁজ পাইনি। ’
সোমবার ( ২ জুলাই) দুপুরে শাহবাগ থানার সামনে সারাবাংলার প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই বর্ণনা করছিলেন নিখোঁজ শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম রাজীবের (২৪) মা খোরশেদা বেগম। কিছুক্ষণ পরপরই ছেলের জন্য আর্তনাদ করা খোরশেদার অভিযোগ, গতকাল রাত থেকে অনেক চেষ্টা করেও পুলিশের সাথে কথা বলতে পারেননি তারা। রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত তার ছেলের বিষয়ে শাহবাগ থানা থেকে কিছুই নিশ্চিত করা হয়নি।
রাজীবের মা বলেন, যদি তাদের ছেলেকে পুলিশ আটক না করে তাহলে কারা তাকে নিয়ে গেছে, সে কোথায় আছে? খোরশেদা বেগম সারাবাংলাকে বলেন,‘ আমি অশিক্ষিত মানুষ, কি কারণে আমার ছেলেরে আটক করছে তাও জানিনা। শুনেছি কিসের আন্দোলন হয়েছে কাল, সেখান থেকে নাকি তারে ধরে নিয়ে গেছে। আমি শুধু জানতে চাই আমার ছেলে কোথায়? তোমরা আমার ছেলের খোঁজ এনে দাও! সারা রাত এ জায়গায় বসে ছিলাম। কেউ কিচ্ছু জানে না! তাহলে আমার ছেলে গেলো কই’?
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাতে থানায় অনেক চেষ্টার পর ঢুকে দূর থেকে দেখছি আমার পোলার ব্যাগ, ল্যাপটপ, প্যান্টের ব্যাল্ট। এসব যদি থানায় থাকে তাইলে আমার পোলা গেলো কই? নিশ্চয় হেও (ছেলে) থানায় আছে। কিন্তু পুলিশ স্বীকার করে না।
রাজিবের বাবা হানিফ মিয়া জানান, রাজধানীর হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রাজিব। তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার চর চাষি এলাকায়।
হানিফ মিয়া বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে যে ফোন থেকে আমাদেরকে আটকের বিষয়টি জানিয়েছে সে ফোন নম্বরটিতে পরে ফোন দিলে সেখানে আর ফোন না দেয়ার জন্য নিষেধ করা হয়। তিনি আরও বলেন, সোমবারের খবরের কাগজে আমার ছেলের একটা ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানেই দেখলাম , আমাদের ছেলে রাজীবকে কয়েকজন যুবক রাস্তায় ফেলে মারতেছে। আমি এসব ঘটনার কিছুই জানিনা। তবে তার বন্ধুরা বলছে, রাজীবকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী ভেবে ছাত্রলীগ মারধর করেছে। এরপর নাকি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ যদি ধরে নিয়ে যায় তাহলে জানালেই তো পারে। আমরা একটু নিশ্চিত হতে পারতাম। যে কিন্তু তাও তো বলছে না।
রাজীবের বিষয়ে শাহবাগ থানায় কথা বলতে গেলে থানায় প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করতে করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেনি।
সারাবাংলা/এসএইচ/জেডএফ