Sunday 13 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিজেপি-আরএসএস’র পলিসি বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূল করা : নুর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২৫ ১৮:২৩ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ১৯:২৬

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নুরুল হক নুর। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূল করা ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং আরএসএস’র পলিসি বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। এর আগে তিনি প্রেসক্লাবের ‘জুলাই স্মৃতি হলে’ চট্টগ্রাম মহানগর গণঅধিকার পরিষদ ‘গণ-অভ্যুত্থানের জন–আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্র সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসে ভারতের ভূমিকা উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবেশি দেশ, তাদের আমরা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে বলে বারবার সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছি। কিন্তু তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিটা আমরা বরাবর দেখেছি যে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। আমরা পরিষ্কার দেখেছি, গত ১৬ বছরে যে বিনা ভোটের নির্বাচন, যেসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, এমনকি ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যে ব্লুপ্রিন্ট হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে, ২০১৮ সালেন আগের রাতের নির্বাচন, ২০২৪ সালের আমি-ডামির নির্বাচন- সবগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে এনডোর্স করেছে আমাদের এই প্রতিবেশি বন্ধুরাষ্ট্র। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার জন্য তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল।’

বিজ্ঞাপন

নুর বলেন, ‘এই জায়গা থেকে আমরা বলতে পারি না যে, তাদের আচরণটা বন্ধুত্বসুলভ ছিল। তবে আমাদের দিক থেকে বারবার পজেটিভ অ্যাপ্রোচ ছিল। একটা ইনফরমাল মিটিংয়ে আমি তাদের বলেছিলাম, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তাদের একজন কূটনীতিককে আমি বলেছিলাম, তোমরা কী একটা পরিষ্কার লাইন বলতে পার একটা বিবৃতির মাধ্যমে, পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে বলছে যে- তারা বাংলাদেশে একটা ফ্রি, ফেয়ার এন্ড ক্রেডিবল ইলেকশন চায়। তখন তিনি বললেন- না, না আমরা তো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে মাথা ঘামায় না।’

‘অথচ বাংলাদেশের গত ১৬ বছরে আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদ এবং বাংলাদেশের কোনো কোনো দলকে নির্মূল করার জন্য তাদের রাষ্ট্রীয় পলিসি আছে। বিশেষ করে আপনারা দেখেছেন, ভারতের যে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তাদের যে আদর্শিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস, তাদের পলিসি হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের নির্মূল করা। এটা একদম পরিষ্কার।’

‘আমরা আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান- একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা বসবাস করছি। বাংলাদেশে কার্যত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে উদাহরণ, এটা পৃথিবীর খুব কম দেশে পাবেন।’

দেশে যৌথবাহিনীর অভিযান জোরদারের পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী যদি অভিযান পরিচালনা করে, আমার ধারণা দেশে বর্তমানে যে পরিস্থিতি, সেটার উন্নতি হতে পারে। আধিপত্য, চাঁদাবাজি, মাস্তানি ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তবে সাধারণ মানুষ আর ছাত্রদের যেন না ধরে। হাজারো শহিদদের রক্তের বিনিময়ে দেশ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। অথচ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত সারাদেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে দেশকে আবারও গণঅভ্যুত্থানের আগের পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।’

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে ও বৈশাখী টিভির ব্যুরো প্রধান গোলামা মওলা মুরাদের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- সিএমইউজের সাবেক সভাপতি সামশুল হক হায়দারী, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান।

নির্বাচনে কোনো জোটে যাবে না নুর

প্রেসক্লাবে মতবিনিময়ের আগে গণঅধিকার পরিষদের আলোচনা সভায় নুরুল হক নুর জানিয়েছেন, সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণ অধিকার পরিষদ কোনো রাজনৈতিক জোটে যাবে না।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমল থেকে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল এক, ফ্যাসিবাদের পতন। ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা আমাদের যার যার রাজনৈতিক লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা তো বলিনি, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব।’

তিনি বলেন, ‘হয়তো আমাদের অনেক বক্তব্য বিএনপির পক্ষে গেছে, জামায়াতের পক্ষে গেছে, চরমোনাইয়ের পক্ষে গেছে। সে ক্ষেত্রে অনেকে হয়তো মনে করেছেন, আমাদের সঙ্গে বোধ হয় বিএনপির জোট হয়েছে, সমঝোতা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন আর জামায়াতের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিলে মনে করেন তাদের সঙ্গে জোট হয়ে গেছে।’

আনুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে নুর বলেন, ‘আনুপাতিক হারে নির্বাচনের বিষয়ে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। অনেকে বলছে, এটা রাজনৈতিক জটিলতা তৈরির জন্য কিংবা নির্বাচন পেছানোর জন্য। তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এই অবস্থান ছিল দলের ঘোষণার সময় থেকে। সে সময় বলেছিলাম, গণপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদের জন্য আমরা গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও আনুপাতিক হারে নির্বাচন চাই।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএস

গণ অধিকার পরিষদ জোট নির্বাচন নুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর