ঢাকা: খেলাপি ঋণের আগ্রাসী থাবা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকগুলোতে। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৬৩ শতাংশই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। একই সঙ্গে হাতেগোনা কয়েকটি ব্যাংক ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে রয়েছে প্রভিশন ঘাটতি।
বাংলাদেশ ব্যাংক এর তথ্য মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশের বেসরকারি খাতের ৪৩টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কের হিসাবে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে ১৩টি ব্যাংক। এছাড়া এগুলোর কোনো কোনোটিতে খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৯০ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটিতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৬১৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ২৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ব্যাংকটিতে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে- ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৭ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৬৪.০৩% ও প্রভিশন ঘাটতি ২১,৯২০.৬৩ কোটি টাকা); আইএফআইসি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৫ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৫৮.৩৯% ও প্রভিশন ঘাটতি ১৮,৯১৭.৯০ কোটি টাকা); ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২৫ হাজার ৩০২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৮৯.৮১% ও প্রভিশন ঘাটতি ১৪,২৬৩.৮৪ কোটি টাকা); ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২২ হাজার ৬৪৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৩৬.৬৩% ও প্রভিশন ঘাটতি ১৫,২৭০.৭৫ কোটি টাকা); সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৪ হাজার ৩৫৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৩৭.৫৮% ও প্রভিশন ঘাটতি ১০,৫৭০.৭০ কোটি টাকা); প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ২৯% ও প্রভিশন ঘাটতি ৭,০১৬.৮৪ কোটি টাকা); এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৮৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ২৬.৩২%); ইউসিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৬২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ১৪.৬৭% ও প্রভিশন ঘাটতি ২,৬৪৩.২৩ কোটি টাকা); গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৯৪২ কোটি ১০ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৫৪.৩৬%); আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৭ হাজার ৭৯৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ১৫.৫৭%); পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা (খেলাপি ঋণের হার ৮৭.১৮%) এবং ব্যাংক এশিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৫৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা (খেলাপি ঋণের হার ১৪.৩৫%)।
এছাড়া সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ৩ হাজার ৫৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা; ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৩ হাজার ২০৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; ওয়ান ব্যাংকের ৩ হাজার ২০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা; এক্সিম ব্যাংকের ৩ হাজার ১৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা; মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২ হাজার ৬৮৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা; সিটি ব্যাংকের ২ হাজার ৭৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা; পূবালী ব্যাংকের ২ হাজার ৬০০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা; মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ২ হাজার ৫৮১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা; এনআরবিসিএল ব্যাংকের ২ হাজার ৪২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা; ট্রাস্ট ব্যাংকের ২ হাজার ২৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা; ঢাকা ব্যাংকের ২ হাজার ৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা; স্ট্যান্ডান্ড ব্যাংকের ১ হাজার ৯৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা; ব্র্যাক ব্যাংকের ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৬০ লাখ টাকা; এনসিসিএল ব্যাংকের ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা; শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৮২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা; বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; প্রাইম ব্যাংকের ১ হাজার ৪২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; উত্তরা ব্যাংকের ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা; এনআরবি ব্যাংকের ১ হাজার ২৬৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা; যমুনা ব্যাংকের ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।
অবশিষ্ট ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭শ’ কোটি টাকার নিচে। তবে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ মাত্র ৬৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা হলেও এর খেলাপি ঋণের হার ৯১ শতাংশের বেশি। এছাড়া ১০০ কোটি টাকা কিংবা ৫০ কোটি টাকার কম খেলাপি ঋণ রয়েছে- এমন ব্যাংকও তালিকায় রয়েছে।