চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলীতে সাগর উপকূলে শেখ রাসেলের নামে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের নির্মাণ করা স্টেডিয়াম গুঁড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৪০ একর জমি দখল করে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালীরা ওই স্টেডিয়াম ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাউবো’র সেই ৪০ একর জমি উদ্ধারে রোববার (১৩ জুলাই) থেকে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। নগরীর উত্তর কাট্টলীতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রথমদিনের অভিযানে প্রায় ১২ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন ও পাউবো’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নগরীর উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলীর বাংলাবাজার পর্যন্ত সাগর উপকূলের অংশ দখলমুক্ত করতে টানা আরও দুইদিন অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন এতে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুছাইন মুহাম্মদ। অভিযানে আরও ছিলেন নগরীর পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারিস্তা করিম, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান এবং পাউবো’র চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ।

সাগর উপকূল দখল করে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’, গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন। ছবি: সারাবাংলা
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রভাব খাটিয়ে নগরীর টোল রোডসংলগ্ন সাগর উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছেন একাধিক ব্যক্তি। ‘দখলবাজি’ আড়াল করতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মনজুর আলমের উদ্যোগে হোসনে আরা মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অর্থায়নে গড়ে তোলা হয়েছিল। স্টেডিয়ামটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩৩০ ফুট ও প্রস্থ ২০০ ফুট। ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনে স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মিনি স্টেডিয়ামের পুরোটাই সরকারি খাসজমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। স্টেডিয়ামের সঙ্গে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ একটি কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটর ইয়ার্ড বানিয়েছিল। স্টেডিয়ামের অপর পাশে প্রায় পৌনে তিন একর জায়গা ভরাট করে তারা চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছিল। এর সবগুলোই সরকারি খাসজমিতে করা হয়েছিল। অভিযানে আমরা সবগুলো স্থাপনা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছি। তবে সেখানে যেসব সরঞ্জামাদি ছিল সেগুলোর আমরা কোনো ক্ষতি করিনি।’
উল্লেখ্য, শিল্পপতি এম মনজুর আলম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে উত্তর কাট্টলী থেকে তিনবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে চসিকের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে আবারও বিএনপি থেকে প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের সন্ত্রাস-ভোটকেন্দ্র দখলের মুখে টিকতে পারেননি। পরাজিত হয়ে তিনি বিএনপি ছেড়ে আসেন। বছরখানেক নিশ্চুপ থাকার পর ফের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন।

সাগর উপকূল দখল করে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’, গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন। ছবি: সারাবাংলা
মনজুরের ভাতিজা দিদারুল আলম চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড, উত্তর কাট্টলী) থেকে দুইবার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মিনি স্টেডিয়ামের সঙ্গে প্রায় সাত একর সরকারি খাসজমিতে যেসব বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছিল, সেগুলো দিদারুল আলম তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেছিলেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহমেদ, সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেমসহ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আরও কয়েকজন নেতা এবং ব্যবসায়ীর দখলে আছে ৩০ একরেরও বেশি সরকারি খাসজমি, যেগুলোতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে।
পাউবো কর্মকর্তা শওকত ইবনে সাহীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের টার্গেট মোট ৪০ একর জমি দখলমুক্ত করা। প্রথমদিনে আমরা ১২ একরের মতো করেছি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত অভিযান চলবে। অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদের পর দখলমুক্ত জমিতে পিলার দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। এরপর সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে।’