Monday 14 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাথা গরম করা যাবে না— নেতাকর্মীদের আমীর খসরু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২৫ ২১:০৯ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ২১:১৯
প্রয়াত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: উসকানির ফাঁদে পা না দিয়ে নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘মাথা গরম করা যাবে না, রাজনীতিতে মাথা গরম করলে আপনি হেরে যাবেন।’

রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে প্রয়াত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় আমরা ঘোষণা করেছি। আমাদের তারেক রহমান ঘোষণা করেছেন। আজ যারা বাংলাদেশের রাজনীতিকে আবার কলুষিত করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, সহনশীল রাজনীতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, সম্মানজনক রাজনীতিকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, তাদের বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাখান করবে।’

বিজ্ঞাপন

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি করি, আমরা সেই রাজনীতি করবো না। আমরা সেই প্রতিক্রিয়া দেখাবো না। ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে, সহনশীল হতে হবে, অন্যের মতের প্রতি সম্মান জানাতে হবে। ভিন্নমত পোষণ করে হলেও সম্মান জানাতে হবে। এটাই বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা। তারা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। শেখ হাসিনাকে তাড়ানোর পেছনে যেসব কারণ ছিল, তার মধ্যে প্রধান কারণ ছিল আমরা যাতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। আমরা যাতে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পেতে পারি। আমরা যাতে মুক্ত আবহাওয়ায় চলতে পারি।’

‘সুতরাং কেউ আমার বিরুদ্ধে বলুক, দলের বিরুদ্ধে বলুক, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলুক, আমাদের মত হচ্ছে তার সেই স্বাধীনতা আছে বলার। আমি এর বাইরে আর কিছু বলতে চাই না। আপনি উত্তরটা এভাবে দেন, এর চেয়ে বড় কঠিন উত্তর আর হতে পারে না। অনেকসময় উত্তর না দিয়ে আপনি যে উত্তর দেবেন, তার উত্তর অনেক বেশি শক্তিশালী। বিএনপির আগামীদিনের রাজনীতি হবে সেরকম।’

নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আপনি শত সংস্কার করেন, হাজার সংস্কার করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক চরিত্র-সংস্কৃতি যদি না বদলায় কোনো সংস্কারে কাজ হবে না। বিএনপি সেই সংস্কারের কাজটাই করছে। তারেক রহমানও সেই কাজটাই করছেন। আমরা বিএনপি করি, আমাদের সবাইকে সেই কাজটাই করতে হবে। ঠাণ্ডা মাথায়, রাজনীতিতে আপনি মাথা গরম করলে, আপনি হেরে গেছেন। মাথা গরম করা যাবে না।’

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘তারা যে কাজগুলো করছে, দেশের মানুষ জবাব দেবে। আমাদের কাজ হচ্ছে, যেজন্য আমরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছি, গুম হয়েছি, খুন হয়েছি, পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছি, বিনা চিকিৎসায় জেলখানায় মৃত্যুবরণ করেছে, লাখ-লাখ মানুষ লাখ-লাখ মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে, সেই লক্ষ্যে অটুট থাকা। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য, যে বাংলাদেশে আমার ভোটাধিকার থাকবে, আমি আমার প্রতিনিধি নির্বাচন করবো, আমার প্রতিনিধি সংসদে, সরকারে গিয়ে আমার কাছে জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ থাকবে, সেই বাংলাদেশ গড়ার জন্যই আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি।’

লন্ডনে ড.-ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে তারেক রহমানের সাঙ্গে ড. ইউনূসের যে বৈঠকটা হয়েছে, সেদিন থেকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে, বাংলাদেশ একটি নির্বাচিত সংসদ গঠন করে, বাংলাদেশের মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা, তা পূরণ করতে হলে সেটা একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।’

সংস্কার কমিশন-ঐক্যমত্য কমিশনের কার্যক্রমের প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘এই কমিশন, সেই কমিশন, কোনো কমিশন বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝবে না। বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা একমাত্র বুঝবেন রাজনীতিবিদরা। ঢাকা শহরে দশজন বিজ্ঞ ব্যক্তি এক টেবিলে বসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না। তাদের সেই অধিকার কেউ দেয়নি। এই পরিবর্তন আসতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, নির্বাচনের মাধ্যমে, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে, নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এ পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষের নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে আকাঙ্খা সেটা পূরণ করতে পারবে।’

যারা নির্বাচন করতে চায় না, তাদের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, গণতন্ত্রকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি অসহনশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে, তাদের বলছি- আপনি রাজনৈতিক দল হবেন কিন্তু নির্বাচনে যাবেন না, নির্বাচনে যেতে চাইবেন না, নির্বাচন করতে দেবেন না, তো আপনারা এক কাজ করেন, প্রেসার গ্রুপ হিসেবেও তো একটা দায়িত্ব আছে, আপনারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করেন, রাজনীতি করার দরকার কী ! আর যারা রাজনীতি করতে চায়, তারা রাজনীতি করুক।’

‘এখন এরা (কেউ কেউ) বলছে ইলেকশনেরই দরকার নেই। শেখ হাসিনা তো তা-ও আমি-ডামি করে দেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এরা তো বলছে ইলেকশনেরই দরকার নেই, ইলেকশনের দিকে যাবারও দরকার নেই, ইলেকশনের প্রক্রিয়াও হতে পারবে না। তাহলে এদের কি রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ্য করা উচিৎ ? এরা কি গণতন্ত্রের বিপক্ষের শক্তি নয় ? এরা কি জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিপক্ষের শক্তি নয় ? এরা কি জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বিপক্ষের শক্তি নয় ?’

এ অবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে, সহনশীলতার মাধ্যমে, পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ রেখে বিএনপির রাজনীতিকে উচ্চাসনে নিয়ে রাজনীতি এগিয়ে নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার।

সারাবাংলা/আরডি/এসআর

আমীর খসরু বিএনপি স্মরণসভা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর