ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
রোববার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ প্রস্তাব সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সীমাহীন ক্ষমতা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে এখন আছে আর্টিকেল ৯৫-এ। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিককে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায়, যদি তার প্রধান বিচারপতি হওয়ার জন্য যোগ্যতা থাকে। সেখানে হাইকোর্ট ডিভিশন বা আপিল ডিভিশন বা অন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া কোনো কিছু উল্লেখ করা নেই। সাংবিধানিকভাবে সেই ক্ষেত্রে চিফ জাস্টিস নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে নিয়োগের জন্য আমরা বাধ্যবাধকতা রাখি। আপিল বিভাগের মোস্ট সিনিয়র তিনজনের মধ্য থেকে যেন করা হয়। আলোচনায় একটা জায়গায় এসেছিলাম, সিনিয়র মোস্ট দুইজনের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি চিফ জাস্টিস নিয়োগ করবেন।’
বৈঠকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠ দুজনের মধ্য থেকে একজনকে করার দাবি ছিল বিএনপির। অন্যান্য কিছু দল জ্যেষ্ঠতম বিচারককে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে। সবশেষ ঐকমত্য হয়েছে জ্যেষ্ঠতম বিচারকের ব্যাপারে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো দল তার নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি ম্যান্ডেট প্রাপ্ত হয় তখন তারা দুইজনের প্রভিশনটা সংবিধানে রাখতে পারবে। যেহেতু জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে চাই, এখানে আমরা একমত হয়েছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় জুডিশিয়ারিকে বাদ রেখে তার আগে কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা যায় কি না এ ব্যাপারে সবাই একমত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে তো দ্বিমত সারাজাতির মধ্যেই নেই। সবাই একমত। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আগের পুরোটাই হচ্ছে জুডিশিয়ারি নির্ভর। সেজন্য সেই জুডিশিয়ারি নির্ভর প্রস্তাবগুলোর বাইরে যদি কয়েকটি প্রস্তাবে আমরা আগে একমত হতে পারি তাহলে জুডিশিয়ারিকে বিতর্কের বাইরে রাখা যায়।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার, যদি সাধারণ নিয়মে বিলুপ্ত হয়, মেয়াদ শেষান্তে তার ৩০ দিনের আগে এই উদ্যোগ নেবেন সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নাগরিক, যারা এই অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য তাদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য জানান, যদি সেই অপশন না পাওয়া যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার- সেক্ষেত্রে ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদলের হবে। চারজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে এবং এটার সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতিও করতে পারেন, স্পিকারও করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে সেখানে রাষ্ট্রপতির ভোটিং পাওয়ার থাকবে না। আর স্পিকার সভাপতিত্ব করলে স্পিকারের ভোটিং থাকবে। রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করলে শুধু শুনানি করবেন। রাষ্ট্রপতি কোনো ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন না। চারজন মিলে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করতে পারেন তাহলে এখানে এটা সমাপ্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি সেটা না হয় তাহলে প্রস্তাব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার অবশ্যই বিরোধীপক্ষ থেকে যিনি হবেন। এই চারজন তার সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় সর্বোচ্চ দল, মানে প্রথম দল তো সরকারি দল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিরোধীদল অথবা তৃতীয় যদি কোনো বৃহৎ দল থাকে সেই তৃতীয় বৃহৎ দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রিজাইড করবেন এবং রাষ্ট্রপতির ভোটিং ক্ষমতা থাকবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে রাষ্ট্রপতিকে রাখা ঠিক হবে না এমন মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে না রাখতে পারলেই ভালো, তারপরও যদি ঐকমত্যে আসা না যায় সেক্ষেত্রে একদম লাস্ট অপশন হিসেবে রাখা যায় একটা ইনস্টিটিউশন প্রধানকে। এটাতেও যদি না পাওয়া যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিরোধী দলগুলোর মধ্যে, এখানে আবার প্রধান বিরোধীদল বাদে যারা ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে তাদের পক্ষ থেকে একজন, এখানে কিন্তু সবগুলো দল মিলে একজন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোটিং ক্ষমতা থাকবে। এগুলো যদি না হয় তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতে যা আছে সেখানে আমরা ফিরে আসতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে একটা প্রস্তাব দিয়েছি, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্যে যাদের বয়স ৭৫ বেশি হবে না, তাদের মধ্য থেকে যাদের পাওয়া যায় সিলেকশন হবে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের কমিটি যাচাই-বাছাই করে একজনকে যদি সিলেকশন করতে পারেন।’
জরুরি অবস্থা জারি সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সংবিধানের আর্টিকেল ১৪১-এর ‘ক’তে কী কী বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায় তা আছে। যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ, এরপর একটা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কথা বলা আছে। এ অভ্যন্তরীণ গোলযোগ যেহেতু একটা ব্যাপক-অপব্যবহার হওয়ার বা করার একটা সুযোগ ছিল, তার পরিবর্তে যদি এখানে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি হুমকি, রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই শব্দগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তাব ছিল। এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।