Monday 14 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে কেউ ভাবেনি’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৩ জুলাই ২০২৫ ২৩:২৬

ঢাকা: ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সরকারের দমন-পীড়নের মুখে সাহসিকতার সঙ্গে মাঠে ছিলেন দেশের শত শত ক্যাম্পাস সাংবাদিক। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে, রক্তাক্ত সহপাঠীদের ছবি তুলে, ক্যাম্পাসজুড়ে নিপীড়নের চিত্র বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন তারা। আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিও প্রচারিত হয়েছে তাদের কলম ও ক্যামেরার মাধ্যমে। কিন্তু অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রতি নেই কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, নেই ন্যূনতম বেতন কাঠামো, নিরাপত্তা কিংবা পেশাগত সুযোগ-সুবিধা।

রোববার (১৩ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

“কেউ কেউ কথা রাখে” শিরোনামে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান। সভায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে অবদান রাখা শিক্ষক, সাংবাদিক এবং গুণিজনদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, ‘রিপোর্ট একটু এদিক-সেদিক হলেই ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের চাকরি যায় যায় অবস্থা হয়। নেই কোনো বেতন কাঠামো, নেই নিরাপত্তা বা সুবিধা। অথচ অভ্যুত্থানের পর তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বা মাহফুজ আলম-কেউই ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে একটিবার ভাবেননি।’

ডুজার দপ্তর সম্পাদক তাওসিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৯ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বীভৎস চিত্র আমাদের চোখের সামনে ছিল। আমরা বাড়ি ফিরিনি। শাহবাগ ও সায়েন্স ল্যাবের ছবিগুলো পাঠিয়েছিলাম আমরাই। কিন্তু এই সাহসিকতার কোনো মূল্য আজও দেয়া হয়নি।’

ডেইলি স্টার বাংলার সাহিত্য সম্পাদক ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে হল বন্ধ করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় ক্যাম্পাসেই। সেই বর্বরতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছিল আমার ক্যাম্পাস সাংবাদিক ভাইয়েরা। কিন্তু আজও তারা ঠিকমতো বেতন পায় না। মিডিয়াগুলো তাদের দিয়ে দিনরাত কাজ করায়, কিন্তু ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও দেয় না।’

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর অধ্যাপক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিকাশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের অবদান অনস্বীকার্য। ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে তারা কেবল সংবাদ পরিবেশন করেনি, বরং ইতিহাসের জীবন্ত দলিল তৈরি করেছে। অথচ তাদের জন্য কোনো পুরস্কার, বৃত্তি বা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়নি, এটি জাতীয় দুর্ভাগ্য।’

এএফপির সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী মাজেদ বলেন, ‘বর্তমানকে ভবিষ্যতের জন্য ডকুমেন্ট করার দায়িত্ব ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা দারুণভাবে পালন করেছে। বহিরাগত এনে ছাত্রলীগ যখন ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে, তখন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। অথচ এক বছর পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও অধিকার থেকে বঞ্চিত।’

আলোচনার শেষে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দিয়ে বলেন, ‘যারা রক্ত আর শব্দ দিয়ে ইতিহাস লিখেছেন, আমরা তাদের ভুলিনি। এই সভা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা প্রকাশের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।’

এ আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন যাত্রাবাড়ী জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক রিদুয়ান হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগান্তর রিপোর্টার মোছাদ্দেকুর রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/কেকে/এসএস

অভ্যুত্থান ক্যাম্পাস সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর