Monday 14 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে মন্তব্য
মধ্যরাতে উত্তাল ঢাবি, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম দৃশ্যমান প্রতিবাদ

কানজুল কারাম কৌষিক, ঢাবি করেস্পন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২৫ ১০:০৫

জুলাইয়ের দিনলিপি। ১৪ জুলাই ২০২৪। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ১৪ জুলাই ২০২৪। দিনটি ছিল রোববার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গর্জে ওঠা দিনগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্য ঘিরে ক্ষুব্ধ হয়ে মধ্যরাতেই রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা।

এই বিক্ষোভ-ই ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরাসরি শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রথম দৃশ্যমান প্রতিবাদ। এর আগে, ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন থাকলেও শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিরোধিতা দৃশ্যমান হয়নি।

বিজ্ঞাপন

১৪ জুলাই বিকেলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন— ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না, যত রাজাকারের বাচ্চারা মেধাবী? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে?’ এই বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দেয়। এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা ঢাবিতে রাতে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শুরু হয় রোববার রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে।

মধ্যরাতে মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে সমবেত হন। ঘণ্টাখানেক পর হলগুলো থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১২টার দিকে টিএসসিতে হাজারো শিক্ষার্থীর সমাগম। অনেকেই ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন। আধা ঘণ্টা পর তারা আবার টিএসসিতে চলে যান।

রাত দুইটা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী টিএসসিতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যান। তারপর ছাত্রীরা নিজ নিজ হলে ফিরে যান। এক সময় ছাত্ররাও হলে ফিরতে থাকেন। হঠাৎ রাত দু্ইটার পর বুয়েটের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। টিএসসি ঘুরে তারা মিছিল নিয়ে আবার নিজেদের ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

বিক্ষোভে ছাত্রীদের উপস্থিতি সাড়া ফেলেছিল

মধ্যরাতে নারী শিক্ষার্থীরা হলের তালা ভেঙে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বের হয়েছিল। বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরাও এই বিক্ষোভে যোগ দেয়। এ সময় তারা যার যার রুম থেকে থালা-বাটি-চামচসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে সেগুলো বাজিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার,স্বৈরাচার’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

১৪ জুলাই মধ্যরাতের স্মৃতিচারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সহ-সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে কবি সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরা বিক্ষোভ মিছিলে যেতে চাইলে আমরা হল প্রভোস্টকে বলি গেইট খুলে দিতে। তখন হল খুলে দেওয়া হলে আমাদের আর তালা ভেঙে বের হতে হয়নি। তবে, অন্যান্য নারী হলের শিক্ষার্থীদের হলের তালা ভেঙে বের হতে হয়েছিল।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা রিফতী আল জাবেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন রাতে হঠাৎ-ই রোকেয়া হলে থালা-বাটির বাজানার শব্দ শুনতে পাই। আপুরা দলবদ্ধ হয়ে থালা-বাটি বাজাতে বাজাতে মিছিলের জন্য নিচে যাচ্ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমরা সবাই মিছিল নিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাই। সেদিন পাঁচটি নারী হলের শিক্ষার্থীরাই রাজপথে নেমে এসেছিলেন। তাদের এই অবস্থান আন্দোলনকে বেগবান করেছিল।’

বিক্ষোভ ছাত্রীদের হলেও নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী নেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের রাজু ভাস্কর্যের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, সার্জিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মাহিন সরকার, আবু বাকের মজুমদার, আব্দুল কাদের, উমামা ফাতেমা, নুসরাত তাবাসসুমসহ অনেকেই সশরীরে উপস্থিত থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি সংগঠিত করেন। তবে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম তখন জানিয়েছিলেন, এটা তাদের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি নয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের জায়গা থেকেই প্রতিবাদ করছে।

সারাবাংলা/কেকে/পিটিএম

১৪ জুলাই ২০২৪ উত্তাল ঢা‌বি মন্তব্য রাজাকারের নাতিপুতি শিক্ষার্থী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর