ঢাকা: উজানের দেশ বাঁধ খুলে পানি ছাড়ার আগ মুহূর্তে তথ্য দিলে বন্যার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঢলের মাত্রা সম্পর্কে তথ্য না পাওয়ায় বাংলাদেশ প্রস্তুত থাকতে পারে না বলে জানান তিনি।
সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নতুন ওয়েবসাইট (ffwc.gov.bd) এবং ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি এসেই শুনেছি, রিয়েল টাইম ডেটা নাই আমাদের। উজানের দেশ যদি আমাদেরকে না জানায় ভারী মানে কত, তাইলে আমরা বেশিটা জানতে পারি না। ফলে উজানের দেশ যদি আমাদের দুই ঘণ্টা আগেই বলে, আমি গেইট খুলে দেব; ২ ঘণ্টায় তো আর আপনি কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেন না। রিয়েল টাইম তথ্য পেতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘এসব কারণে আমরা ইউকেতে কথা বলেছি এবং ইউকে তো খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে, ওরা আমাদেরকে সাইট স্পেসিফিক এবং রিয়েল টাইম ডেটাতে অ্যাকসেস দিয়ে আমাদের সঙ্গে একটা সমঝোতায় যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করে বন্যা মোকাবিলা সম্ভব নয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ফেনীর যে বন্যা, ওটা কিন্তু আমাদের আশঙ্কাটাকে আরও অনেক বাড়িয়ে তোলে। তার কারণ হচ্ছে, আমরা তো আরও বেশি এগুলোর ভেতর দিয়ে যাব। কতটা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সমাধান আপনি দিতে পারবেন? আমাদের মতন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অবকাঠামোগত প্রটেকশন আপনি কতটা দিতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ৫৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতকে আপনি মোকাবিলা করতে পারবেন? কতটা অবকাঠামোগত সমাধান হলে ২১ ফিট পানিকে আপনি মোকাবিলা করতে পারবেন? ফলে প্রাক-প্রস্তুতিটাই আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেক বেশি জরুরি।’
পানি সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রাক-প্রস্তুতির জন্য বন্যা ও বৃষ্টির পূর্বাভাসের তথ্যের সঙ্গে কোন এলাকায় নদী ভাঙনের ঝুঁকি বেশি, সেই তথ্যও লাগবে। পাশাপাশি সেসব এলাকায় সামনের দিনগুলোতে কী হতে পারে তারও পূর্বাভাস লাগবে, যাতে করে নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে জনবসতি ও অবকাঠামো নির্মাণে বিধিনিষেধ রাখা যায়।’
তিনি বলেন, ‘নতুন যে ওয়েবসাইট চালু হলো, তাতে ১০ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি ও পানি বাড়া-কমার পূর্বাভাস মিলবে। একইসঙ্গে মিলবে সতর্কবার্তার নোটিফিকেশন। এ ছাড়া গবেষণার জন্য বৃষ্টি ও বন্যার কয়েক বছরের তথ্য, গতি-প্রকৃতির তথ্য পাওয়া যাবে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন চালু হওয়া ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম দেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি, আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা ও আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ে নতুন মাত্রা আনবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে এই প্লাটফর্ম। ভয়েস মেসেজ, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড ও মোবাইল ফিচারের মাধ্যমে এ প্লাটফর্ম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্যোগ পূর্বাভাসের আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা রাইমস ও বিশ্ব ব্যাংকের কেয়ার ফর সাউথ এশিয়া প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে এসব সেবা চালু করা হয়েছে।