Tuesday 15 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
দেশব্যাপী কোটা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা, রণক্ষেত্র ঢাবি

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৯

১৫ জুলাই ২০২৪। কোটা আন্দোলন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে আরেকটি রক্তাক্ত দিন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান ছাত্র-আন্দোলন সেদিন মুখোমুখি হয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সশস্ত্র হামলার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে রণক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। রক্তাক্ত হয় রাজপথ, শিক্ষাঙ্গন হারায় নিরাপত্তা।

কটুক্তি থেকে বিস্ফোরণ

১৪ জুলাই বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটুক্তি করেন। এর পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। রাত ১১টার পর ছাত্রী হলগুলো থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে— ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজু ভাস্কর্য।

বিজ্ঞাপন

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর পরই মাঠে নামে ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ)

পরের দিন ১৫ জুলাই ধানমন্ডিতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আত্মস্বীকৃত রাজাকার গত রাতে নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। এর জবাব ছাত্রলীগই দেবে।’

সেদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দিয়েছে, তাদের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুমকি দেন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এই দু’জনের এমন বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

১৫ জুলাই এক দীর্ঘ দহনদিন

পরদিন সকাল থেকে টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য ও হলপাড়া ছিল উত্তাল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের সামনে প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়। মধুর ক্যান্টিন, স্যার এ এফ রহমান হল, শহীদুল্লাহ হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আশপাশে ধাওয়া-পালটাধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় রড, হকিস্টিক ও রামদা হাতে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা যখন আতঙ্কে আশ্রয় নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, সেখানেও হামলা চালানো হয়। এমনকি বার্ন ইনস্টিটিউট পর্যন্তও নিরাপদ আশ্রয় হয়ে ওঠেনি।

একনজরে তৎকালীন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) বিভীষিকা

১৫ জুলাই বেলা ১২টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত সাত কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ার দিকে মিছিল নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিজয় একাত্তর হলের সামনে মূলত সংঘর্ষের সূচনা। তখন আশপাশের হল ও মধুক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে মল চত্বরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।

তৎকালীন ছাত্রলীগের হামলার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ভিসি চত্বর এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রড, হকিস্টিক, রামদাসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ভেতর আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও তাদের মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়।

ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগ্বিদিক চলে যায়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, মহানগর শাখা ছাত্রলীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা মহড়া দেয়। এ হামলায় অনেক নারী শিক্ষার্থীসহ প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেন। এদিন বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন।

এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটেও আহত শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক দফা হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ হলের সামনে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

১৫ জুলাই রাত ১০টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি ও মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্যার এ এফ রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহরুল হক হলে এমন ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলন যুক্ত কি না, তা যাচাই করতে শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি করা হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ততা পেলেই মারধর করা হয়।

এদিকে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা ও মারধর করে কলেজ তৎকালীন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেত্রীরা। শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে যেতে না পারে, সেজন্য কলেজ গেটে তালা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হয়।

কোটা আন্দোলনকারীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কটুক্তির প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে পুরান ঢাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এসে বিক্ষোভে যোগ দেয়। এর আগে, জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের পালটা-পালটি সংঘর্ষে পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে দফায় দফায় হামলা করে শাখা ছাত্রলীগ। তাদের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আবদুর রশিদ জিতুসহ ১৫ জন আহত হন।

এর আগে ১৪ জুলাই মধ্যরাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তৎকালীন ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে এ হামলা চালানো হয়। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। পরে তারা ভিসির বাসভবনে আশ্রয় নেন।

ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। আহতদের মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছে। ককটেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি। আমাদের ওপর এ হামলা পরিকল্পিত। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

নারী শিক্ষার্থীরা টার্গেটে

এদিন-ই প্রথম ইডেন মহিলা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে হামলার লক্ষ্য হন। কলেজ গেটে তালা দেওয়া, দমনমূলক মনিটরিং, প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা— সবমিলিয়ে নারীদের ভূমিকা এবং সাহসই যেন হয়ে উঠেছিল ছাত্ররাজনীতির সামনে প্রধান হুমকি। আর তাই ছাত্রলীগদের হামলার হাত থেকে মুক্তি পায়নি নারীরাও।

সারাদেশেই চলতে থাকে হামলা

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাতে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও কাটাপাহাড়ে তৎকালীন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হামলায় আহত ১০ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবনে বাম ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা। এ ছাড়া, হামলা ও দমন-পীড়ন চলে যশোর, খুলনা, কুমিল্লা ও দিনাজপুরে।

প্রাধ্যক্ষদের বৈঠক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান

ক্যাম্পাসের সহিংসতার ঘটনায় করণীয় ঠিক করতে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রাধ্যক্ষদের নিয়ে বেঠক করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। বৈঠক শেষে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের প্রাধ্যক্ষরা রাতভর হলে অবস্থান করবেন।’

সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় পুলিশ। সন্ধ্যার পর পরই ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

‘রাজাকার বলতে লজ্জা করে না?’- শেখ হাসিনার বক্তব্য

এদিন শিক্ষার্থীরা যখন স্লোগান দিচ্ছিল, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার।’ কে বলেছে ? কে বলেছে ? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!’ আরেকটি স্লোগান ছিল।- ‘তুমি কে ? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার।’ চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলার রাজাকার।’

কিন্তু সরকারের চাপে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে চলছিল, শুধুমাত্র প্রথম স্লোগানটি। তাই নিজেদের রাজাকার সম্বোধন করায় প্রাথমিকভাবে সমালোচনার শিকার হতে থাকে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একসময় ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্লোগান।

এদিন সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেন, ‘নিজেদের রাজাকার বলতে লজ্জা করে না?’ তিনি ভাষণে উল্লেখ করেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী কীভাবে দেশে অত্যাচার চালিয়েছে তা তারা জানে না। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাবোধ হয়নি।’ সারাদেশ তখন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়— কারা রাজাকার, আর কারা তাদের উত্তরাধিকারী?

আওয়ামী লীগ নেতাদেরও উলটো মন্তব্য

তৎকালীন ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) সশস্ত্র হামলার অভিযোগ আসার পরও সরকারি মন্ত্রীদের বক্তব্য ছিল উল্টো। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রাজাকারের পক্ষে স্লোগান রাষ্ট্রবিরোধী।’ সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এ যুগের রাজাকারদের পরিণতি হবে সেই যুগের রাজাকারদের মতো।’

আন্দোলনকারীদের দাবি- ‘ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে’

যে আন্দোলন এতদিন ধরে দাবি জানাচ্ছিল কোটা সংস্কারের, সেই আন্দোলন এদিন নতুন মোড় নেয়। দাবি ওঠে নতুন। আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। তাকে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টায় দেশব্যাপী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং এই আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

১৫ জুলাই ২০২৪ ছাত্রলীগের হামলা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর জুলাই বিপ্লবের এক বছর রণক্ষেত্র ঢাবি রাজাকার স্লোগান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর