ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতি বছর ১৪ জুলাই ‘নারী শিক্ষার্থী দিবস’ পালন করা হবে। এ দিবসটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়াও, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী প্রতিরোধের ঐতিহাসিক অবদানের স্মরণে প্রতি বছর ১৭ জুলাই ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’পালন করা হবে। এটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্যালেন্ডারে যুক্ত থাকবে।’
সোমবার (১৪ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, “সেদিন যারা যোগ দিয়েছিলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও মাদরাসাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে যারা এসেছিলেন তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ছাত্র জনতার এই অভ্যুত্থান আমাদের সামনে একটি নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। সে সুযোগ যাতে আমরা কাজে লাগাতে পারি, সেজন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকছি।”
এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুনর্জাগরন অনুষ্ঠানমালা আয়োজন বিষয়ে সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটির আহ্বায়ক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য আরও বলেন, “আমরা সেদিন অকুতোভয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। একটি উদাহরণ তৈরি হয়েছিলো, যা সারাদেশকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে তোমাদের চোখে-মুখে যে সংকল্প দেখছি, তা আমাদের পরম পাওয়া।”
উপাচার্য অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশ হিসেবে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ”আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে যেকোনো বিভেদ ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশের অগ্রযাত্রায় কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “অনেক রক্তের বিনিময়ে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা আমরা নষ্ট হতে দেব না। আমরা আমাদের ঐক্য ধরে রাখবার জন্য আবারো দৃঢ় অঙ্গীকার করছি।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অংশ নেন। এদিন ছাত্রীরা আন্দোলনের দিনের মতো হল থেকে মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। তারা সেদিনের স্লোগান পুনরায় দেন এবং রাতভর দিবসটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন হিসেবে ÔJULY WOMEN`S DAYÕ পালন করা হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, প্রতিবাদী গান, স্মৃতিচারণ ও ড্রোন শো-এর আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে এলইডি বোর্ড স্থাপন করে অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথমবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাসব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে আহ্বায়ক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩টি পৃথক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- জুলাই বিপ্লব ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে প্রত্যেক অনুষদে একটি করে সেমিনার আয়োজন এবং হল, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটসমূহের উদ্যোগে পৃথকভাবে আলোচনা সভা/সেমিনার আয়োজন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান: তারুণ্যের কন্ঠস্বর’ প্রতিপাদ্য নিয়ে দু’দিনব্যাপী আন্ত:বিভাগ বিতর্ক উৎসব আয়োজন এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন।
এছাড়া, গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হবে। শিক্ষার্থী নির্যাতন করার ঘটনা স্মরণে ১৫ জুলাই প্রত্যেক আবাসিক হলে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। ১৫ জুলাই ২০২৫ ক্যাম্পাসে এলইডি ডিসপ্লে করা হবে। ১৫ জুলাই থেকে ০৫ আগস্টের মধ্যে যে কোন ১দিন সমাজের সকল শ্রেণির অংশগ্রহণে সর্বজনীন একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সকল গ্রাফিতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি প্রকাশনা বের করা হবে। আন্দোলনে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই যোদ্ধাদের একটি সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে।