Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পল্টনে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা, নেপথ্যে ত্রিভুজ প্রেম


২ জুলাই ২০১৮ ১৯:২২

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাজধানীর পুরান পল্টন এলাকায় ১৫ তলার ওপর থেকে ফেলে দিয়ে আলামিন নামে এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) রহস্য উদঘাটন করেছে। ডিবি জানায়, প্রেমিকা হারানোর প্রতিশোধ নিতেই আলামিনকে ছাদ থেকে ফেলে দেয় মিজান। এরই মধ্যে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। মিজানকে কারাগারে রাখা হয়েছে।

সোমবার (২ জুলাই) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আতিকুল ইসলাম সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আলামিন হত্যার ঘটনার কারণ আমরা জানতে পেরেছি। মিজান তাকে ১৫ তলার ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। আদালতে সে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। শিগগিরিই এই মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, আলামিনের লাশ উদ্ধারের পর তার সাথে থাকা ফোনে কললিস্টের সূত্র ধরে আরমান নামে এক ছেলেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আরমানের দেওয়া তথ্য অনুসরণ করেই গ্রেফতার করা হয় মিজানকে। সে স্বীকার করে নিয়েছে, সে একাই হত্যা করেছে আলামিনকে। তার জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে।’

আদালতে মিজানের দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, আরমান, মিজান ও আলামিন- এরা তিন জন মিলে পল্টন ৩৭/২ ভবনের ১৫ তলার ছাদে দারোয়ানকে টাকা দিয়ে ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করত। ঘটনার সময়ও তাদের তিন জনের মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কাজ থাকায় ওই দিন আরমান যেতে পারেনি। পরে মিজান ও আলামিন একইসাথে ছাদে ওঠে।

আদালত সূত্র জানায়, নেত্রকোণার পূর্বধলা এলাকা থেকে মিজানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। মিজান গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, ছয় বছর আগে তার সাথে কুমিল্লার বীথি নামের এক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বীথি প্রায়ই ঢাকায় আসত। এরই মধ্যে ফকিরাপুল এলাকায় আলামিনের সাথে পরিচয় হয় মিজানের। আলামিনকে মামা বলে ডাকত মিজান। এক পর্যায়ে সে আলামিনের সাথে বীথিরও পরিচয় করিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

মিজান পুলিশকে জানায়, আলামিনের সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই বীথি মিজানের কল রিসিভ করে না। কথা বলতে চাইলে বিরক্তি বোধ করে। বীথি ও আলামিন নিয়মিত দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলে কথা বলে- এমন সন্দেহও করতে থাকে মিজান।

মিজানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক পর্যায়ে বীথি প্রসঙ্গে আলামিনকে সতর্ক করে দেয় মিজান। বীথিকে মিজান বিয়ে করবে বলেও জানায় মিজান। কিন্তু বীথি ও আলামিনের মধ্যে কথা বলা অব্যাহত থাকে। পরে গত ২৩ জুন মিজানকে ফোন করে ডেকে নেয় আলামিন। সেখানে একসাথে ইয়াবা ও গাঁজা খায় তারা। রুবেল নামে আরো এক ছেলেও ছিল সেখানে।

মিজান জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে আলামিনের মোবাইলে বীথি কল করলে আলামিন ছাদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় যান। এ সময় আলামিনকে বীথির সাথে কথা বলতে মিজান নিষেধ করলে আলামিন তাকে গালাগালি করে। এ সময় ছাদ থেকে রডের টুকরো দিয়ে পেছন থেকে আলামিনকে মাথায় সজোরে আঘাত করে। আলামিন পেছন দিকে ঘুরতে না ঘুরতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মিজান। রুবেল ছাদের অন্য প্রান্তে থাকায় আলামিনের চিৎকার শুনতে পাননি। এরপরও রুবেল আলামিনের কথা জানতে চাইলে মিজান জানায়, আলামিন দারোয়ানকে ইয়াবা দিতে গেছে। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে রুবেলকে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে যান মিজান।

ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম সারাবাংলা’কে বলেন, একইসাথে কয়েকজন ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করলেও মিজান মূলত একাই আলামিনকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। তাই চার্জশিট দেওয়ার সময় আরমানকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হবে। এরপরই আদালতের নির্দেশে আরমান কারাগার থেকে বের হতে পারবেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) উপকমিশনার খন্দকার নুরুন্নবীর নির্দেশনায় অতিরিক্ত কমিশনার জুয়েল রানার সহযোগিতায় সহকারী কমিশনার আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক আবদুল কাইয়্যুম ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক কামরুল ইসলাম হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটন করেন।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন সকাল ১০টার দিকে পুরানা পল্টনের ৪০/২ নির্মাণাধীন ভবনের পাশে থেকে হাত-পা ভাঙা ও রক্তমাখা অবস্থায় আলামিনের  মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আলামিন ফকিরাপুলে একটি প্রেসে চাকরি করত। তার বাড়ি কুমিল্লায়। আর মিজান মতিঝিল ফখরুদ্দিন হেটেলে ১২ হাজার টাকায় চাকরি করত। তার বাড়ি নেত্রকোণার পূর্বধলা এলাকায়।

আরও পড়ুন-

বাসচাপায় প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর, মিরপুরে রাস্তা অবরোধ

সারাাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন

আইসিইউতে সাইফ আলী খান
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৭

আরো

সম্পর্কিত খবর