ঢাকা: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে এবং সেজন্যই পরস্পর সমালোচনা থাকে। কখনো কখনো তা তীব্রও হতে পারে। কিন্তু, কোনো অবস্থাতেই সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। কারণ, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, ‘১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ, কোনো অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোনো সুযোগ করে দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে, আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনি সংস্কারের কাজ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নাই। ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজি কোনো অর্থেই কমে নাই। সন্ত্রাসও কমে নাই। বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছে স্বাভাবিক কারণেই। জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে।’
রেজাউল করীম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ এই ধরনের রাজনীতি দেখতে চায় না। এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের একটা বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিএনপি থেকে তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এটা প্রমাণিতও বটে। তাই বিএনপি নেতাদেরকে বলব, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজরা বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিয়েই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপির প্রতি হবে এটা স্বাভাবিক। জনতার এই প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। প্রকাশ্যে একজন মানুষকে পিশাচের নির্মমতায় হত্যা করার পরে আপনি জনতার কাছ থেকে মার্জিত ক্ষোভ আশা করতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সোমবার (১৪ জুলাই) ছিল দেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কময়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর কিন্তু মার্জিত সমালোচনা করে আসছে। আমাদের সিনিয়র নায়েবে আমির তার এক বক্তব্যে বিএনপির প্রতি পরামর্শ হিসেবে বলেছেন, এই এই স্লোগান মানুষ দিচ্ছে। আপনারা সতর্ক হোন। তার সেই বক্তব্য খণ্ডিত আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেই খণ্ডিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের ঐতিহাসিক সুফি ও সংস্কার ধারা চরমোনাইকে কেন্দ্র করে রাজপথে নোংরা স্লোগান দেওয়া হয়েছে। চরমোনাই এর মতো একটি আধ্যাত্মিক ধারাকে শায়েস্তা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিএনপির মঞ্চ থেকে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও এনসিপিকে কেন্দ্র করে পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় ও ঢংয়ে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিকে এভাবে কলুষিত করা এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ করা বিএনপির মতো দলের পক্ষে শোভা পায় না।’
রেজাউল করীম বলেন, ‘সরকার কেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তা জাতিকে ব্যাখ্যা করতে হবে। কোনো অদৃশ্য শক্তি যদি সমস্যা তৈরি করে তাহলে তা মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু, আমাদের গৌরবান্বিত সেনাবাহিনী ম্যাজেট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মোতায়েন থাকা অবস্থায় রাজনীতির এই পরিবেশ মেনে নেওয়া যায় না।’