ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে জুলাইয়ের এই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানকে যথাযথ মর্যাদা দিবে। যারা এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছে, তাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে তাদের ইতিহাসের বর্ণনা থাকবে, সেই বৈধতা দেওয়া হবে। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তারও সাংবিধানিক বৈধতা সেইখানে সন্নিবেশিত হবে। সবকিছুই সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কর্তৃক আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের বাঁক বদলের দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একদিনে জুলাই নেমে আসেনি, এর পেছনে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরের শোষণ-শাসনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক এবং শোষকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্যের শিকার হয়ে অবশেষে এসেছিল ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারপর আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নয় বছর ধরে চলেছে অবিরাম আন্দোলন। সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। এখন ফের বিগত আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে ছাত্রগণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেকটি আন্দোলন একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে জড়িত। মাত্র ৩৬ দিনের একটি একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’
জুলাই সনদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র হিসেবে আমরা পাঁচ মাস আগে, ১২ ফেব্রুয়ারিতে জমা দিয়েছি। পরবর্তীতে বিগত ৯ জুলাই তারিখে এর একটি পরিমার্জিত সংস্করণ চাওয়া হয়, যা আমি নিজেই জমা দিয়েছি। তাই যারা জুলাই ঘোষণাপত্র, তার মর্যাদা ও স্বীকৃতি সম্পর্কে জানতে চান সেখানে আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। এ বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়। অর্ডিন্যান্সের কার্যকারিতা শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট একটি দিন থাকে, সংবিধান কার্যকর হওয়ারও একটি নির্দিষ্ট দিন থাকে, কিন্তু ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে দিন নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে যেটা প্রয়োজন তা হলো মর্যাদা এবং সাংবিধানিক স্বীকৃতি। যেন ভবিষ্যতে এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী কোনো মানুষকে কোনো শাসকগোষ্ঠী অবৈধ বা অসাংবিধানিক আখ্যা দিতে না পারে। সেইজন্য জুলাই অভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের স্বীকৃতির প্রয়োজন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনকে জানিয়েছি ৫ আগস্টের আগেই জাতীয় সনদ রূপে এই জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু আমরা যে ধীরগতি লক্ষ্য করছি, তাতে মাঝে মাঝে মনে হয়— নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা এটি করতে পারবে কিনা। তারপরও আমি আশাবাদী। আমি বিশ্বাস করি, আমরা পারব।’
আলোচনা সভায় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘গত বছরের এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পেটোয়া বাহিনী ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। আমরা এ ঘটনাকেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের টার্নিং পয়েন্ট মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরাম, মুগ্ধ, রাব্বী কেউই নিজের কথা ভেবে শহিদ হননি। তারা বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশ আজ একমুখী হয়ে পড়েছে। আমরা দেখতে পাইনি কোনো খুনীর বিচার হয়েছে, আমরা দেখতে পেয়েছি কাঁদা ছোড়াছুড়ি।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র মজলিশ, ছাত্রফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম একশন সোসাইটি, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তবে অনুপস্থিত ছিল ইসলামি ছাত্রশিবির।