রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বিচার বলতে কেবল কাউকে ফাঁসি দিতে হবে তেমন নয়, যদি আমরা আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ইয়ামিনসহ অন্যান্য সকল শহিদ হত্যার বিচার চাই তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে বিচার করতে হবে সমাজটাকে সত্যিকার অর্থে বদলে দিয়ে।’
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আয়োজিত এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধুমাত্র একজনকে ফাঁসি দিয়ে বিচার হয় না। শুধু সত্যিকার অর্থে বিচার চাই তাহলে আমাদের বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে হবে। আমাদের দুর্নীতিবিরোধী সমাজ, সুশাসনের সমাজ করতে হবে আর এই প্রক্রিয়াতে আমরা সকলেই অংশীদার।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আলোচনা সভায় অনেকেই দাবি করে বলেছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের কথা। এটা সত্য যে রংপুর বিভাগ অন্যান্য বিভাগের থেকে সুযোগ সুবিধার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে তবে আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা চাচ্ছি কোন বিভাগই যেন ন্যূনতম একটা শতাংশের নিচে তার জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা না হয়।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা মূলত বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগ। কাজেই এটি চূড়ান্ত করতে উভয় দেশের সম্মতির প্রয়োজন। এ কয়েক মাসে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরে চীনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ। ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন তিস্তাপাড়ের মানুষ আর ভাঙনের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিস্তা পরিকল্পনার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে নদী ভাঙন রোধে কাজ করছে সরকার।’
কুড়িগ্রাম ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। সহজে যাতায়াত করা যায়। ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে।’
রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শ্যামা সুন্দরী খাল উদ্ধার ও সংস্কারে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী শ্যামা সুন্দরী খাল। এক সময় শহরের পানি নিষ্কাশনে খালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। দখল আর দূষণে এখন তা সরু নালায় পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খালটির সংস্কারে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে খালটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি ৬৮টি বর্জ্য প্রবেশ পয়েন্টে ছাঁকনি বসানো হবে। এতে খালে দূষণ কমবে এবং বর্ষাকালে পানির প্রবাহ ফিরে আসবে।’
খালের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শ্যামাসুন্দরী খালের দুইটি স্থানে কৃত্রিম বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধগুলোর যৌক্তিকতা খুঁজে দেখা হবে এবং প্রয়োজন হলে সেগুলো অপসারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে শুষ্ক মৌসুমেই কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালের যেসব পয়েন্ট দিয়ে বর্জ্য প্রবেশ করছে সেগুলোর অপসারণ জরুরি। তবে, বর্জ্যগুলো কোথায় যাবে, তা নিয়ে স্বল্প ব্যয়ে বর্জ্য শোধনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তাও আমরা বিবেচনা করছি।’
উত্তরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটা অন্তর্বর্তী সময়ে দায়িত্বে আছি। পাঁচ বছর মেয়াদি সরকার হলে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেত। তারপরও রংপুরে একটি হাসপাতাল ও তিস্তা নদী নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে- যতদিন স্থায়ী সমাধান না হয় ততদিন যেন এই অঞ্চলের মানুষ বারবার বন্যা, নদীভাঙন বা সেচ-সংকটে না পড়ে। এজন্য প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’