ঢাকা: চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থি উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেছেন, “গোপালগঞ্জ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে।”
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত “জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর শহিদ পরিবার ও আহতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানেরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জুলাই বিপ্লব ঘটিয়েছিল। সেখানে প্রতিহিংসা নয়, বরং শ্রদ্ধা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশা ছিল। কিন্তু কিছু ক্ষমতা-লোভী মানুষ আবারও স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করেছে। সোহাগ হত্যা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।”
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “১৬ জুলাই ২০২৪ সালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। আমরা আবু সাঈদসহ শহিদ মুগ্ধ, খুবাইবসহ সকল শহিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। নগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেনের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “৫ আগস্ট ছিল ফ্যাসিবাদ পতনের দিন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি বলেই আজও পাথর মেরে মানুষ হত্যার দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। গাজা ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তারা বাংলাদেশে এসে মানবাধিকার শেখাবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম বলেন, “জুলাই বিপ্লব ছিল নতুন বাংলাদেশের সূচনা। সেই বিপ্লবের স্লোগান ছিল ‘We want justice’। এখন প্রয়োজন সংস্কার শেষে ‘প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR)’ পদ্ধতিতে নির্বাচন।”
সভাপতির বক্তব্যে ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য শুধু প্রশাসনিক রদবদল নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গভীর সংস্কার। কিন্তু পুলিশ বাহিনীর পোশাক বদলেও চরিত্রের পরিবর্তন আসেনি। এখনও চলছে মামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য।”
তিনি গোপালগঞ্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “হাসিনার প্রেতাত্মাদের আমরা নতুন বাংলাদেশে দেখতে চাই না। তাদের পরিণতি হবে হাসিনার পথেই। হয় তারা ভালো হবে, না হয় ইতিহাসে বিলীন হয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন শহিদ জিল্লু শেখের পিতা হাসান শেখ ও শহিদ আনোয়ারের ভাই আব্দুল্লাহ আল মারুফ।
এসময় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন, নগর উত্তর সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, এ্যাড. মুস্তফা আল মামুন মনির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, মুফতী মোঃ মাছউদুর রহমান, মুফতী নিজামুদ্দীন, মুফতী আব্দুল কুদ্দুস রশিদী, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার অব. আমিনুল হক তালুকদার, আলহাজ আলাউদ্দীন, মাসুম বিল্লাহ, নাজমুল হাসান, হাজী ইসমাঈল প্রমুখ।