Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারীর পারিবারিক কাজের মূল্যায়ন হয় না, নেই স্বীকৃতিও


২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:২৪

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশের একজন নারী প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা সেবামূলক কাজ করলেও পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তার মূল্যায়ন হয় না। কারণ দেশের নীতি ও আইনে নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেই, যার কারণে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন অনেক দূরের বিষয়। ঘরের কাজকে শুধু নারীর কাজ হিসেবে দেখা হয়, কখনো ঘরের কাজকে কাজ হিসেবেই দেখা হয় না।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ শনিবার ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ: নীতি পর্যালোচনা’ নামের এক প্রতিবেদনে এসব তুলে ধরে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তাদের ওপর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের অসম চাপ, আর এসব কাজে সরকারের নীতি ও আইনে মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেই।

অ্যাকশনএইডের গবেষণায় বলা হয়, নেপালের নারীরা গৃহস্থালির সেবামূলক কাজে ব্যয় করেন দৈনিক ৬.৬ ঘণ্টা, বাংলাদেশের নারীরা ৬.৩ ঘণ্টা এবং ভারতের নারীরা ব্যয় করেন দৈনিক ৫.১ ঘণ্টা— অথচ এই কাজে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের পুরুষরা ব্যয় করে যথাক্রমে ২.২ ঘণ্টা, ১.১ ঘণ্টা এবং ভারতে মাত্র ০.৪ ঘণ্টা।

বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভারতের জরিপ বলছে, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় কাজে ব্যয় করার কারণে তারা সময় সংকুলানের চাপে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে নারীরা ঘুম, বিশ্রাম বা ব্যক্তিগত সেবার জন্য কম সময় পাচ্ছে।

গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর প্রধান গবেষক ড. সিমিন মাহমুদ বলেন, ‘এমনিতেই নারীরা ঘরের অনেক কাজ করেন। পাশাপাশি আরও অনেক কাজ করতে হয় তাদের। গবেষণা বলছে, সবমিলিয়ে পুরুষের চাইতেও বেশি কাজ করেন নারীরা। ফলে ঘরের কাজ নিয়ে অসম চাপে পরেন নারীরা। যা তাদেরকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে দিচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয় নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, জাতীয় শ্রমিক নীতি ২০১২, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি ২০১১ ও গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতি থাকলেও এই নীতিগুলোতে সুনির্দিষ্টভাবে পরিবারের সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টনের কোনো বিষয় নেই।

গবেষণার প্রতিবদন ও পরিবারে নারীর সেবামূলক কাজ নিয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমরা গৃহস্থালীর কাজকে সম্মান করি না এবং ধরে নেওয়া হয় যে এটা নারীর কাজ। এমনকি আমরা মনে করি এসব কোনো কাজই না। অর্থনীতিতে স্বীকৃতি না দেওয়ার কারণে সমাজে এবং পরিবারে এই কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে না। একদিকে নারী পরিবার বা সমাজে তার কাজের মূল্যায়ন পান না। অন্যদিকে রাষ্ট্র তার নীতি ও আইনে মূল্যায়নের বিষয়টি উপেক্ষা করছে। ফলে নারীরা ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।”

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, ‘নারীর ঘরের সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না থাকায় তার ক্ষমতায়নের পথে বাধা তৈরি হচ্ছে। তাই এই কাজের একটা আলাদা হিসাব করতে হবে এবং সেটা হতে হবে সুনির্দিষ্ট। যাতে সমাজে বা রাষ্ট্রে তার মূল্যায়ন করা যায়।”

অ্যাকশন এইডের গবেষণায় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে বলা হয়, নারীর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজকে স্বীকৃতি, হ্রাস এবং পুনর্বণ্টনের বিষয়কে আঞ্চলিক নীতি-কাঠামো এবং জাতীয় নীতিসমূহে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর পরিচয়কে যে সকল আন্তঃসম্পর্কীয় বিষয় প্রভাবিত করে সে বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে দেশের আইন ও নীতিতে যুক্ত করা দরকার।

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর