ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশের প্রতিবাদ জানিয়েছে ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, গত ১৪ জুলাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ধারাবাহিক সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংসদে নারী আসন বিষয়ে আলোচনায় সংবিধানে উল্লেখিত জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়, যা ঐকমত্য কমিশনের একান্তই নিজস্ব প্রস্তাব।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির এই সুপারিশ আমাদের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী এবং জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ (৩২.৭), জাতিসংঘ ঘোষিত সিডও সনদ ও এসডিজির সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পাঁচ দশকের সুপারিশ এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন, নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার কমিশন, সংবিধানবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সুপারিশ উপেক্ষা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে জাতীয় সংসদে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত নারী সদস্যের উপস্থিতি নারী সমাজের স্বার্থ ও মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এবং জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা তৈরি করবে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, কোনো সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত হয়।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করছি, নারীর চলমান অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এবং লিঙ্গীয় সমতা ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান যা একটি বৈষম্যহীন, সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠনের অন্তরায় এবং যেখানে প্রতিনিয়ত নারী বিরোধী এবং গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি সক্রিয় রয়েছে। এইরকম একটি অবস্থায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিরোধী কোনো সুপারিশ করা হলে তা নারী বিরোধী শক্তিকেই উৎসাহিত করবে এবং সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকেই সমর্থন করা হবে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি তিনটি দাবি উল্লেখ করেছে। প্রথমত, জাতীয় সংসদের সাধারণ আসনে নারী-পুরুষ উভয়ই নির্বাচন করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন থাকতে হবে তবে তা জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। এবং সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশে উন্নীত করতে হবে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা নয়, প্রয়োজন নারী সমাজের প্রত্যাশার প্রতিফলন।