ঢাকা: বিচার বিভাগের জন্য টেকসই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা হারানো ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীন ও কার্যকর বিচার ব্যবস্থা গঠনে সরকারের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না। যদিও বিচার বিভাগের সংস্কার রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে।’ এ ছাড়া সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগে দ্বৈত শাসন চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ‘মাসদার হোসেন মামলা: ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের শেষ লড়াই ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমদের স্মরণে সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে এ আয়োজন করে ইশতিয়াক সেন্টার।
সভায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি দৃঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া মাসদার হোসেন মামলা ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সৈয়দ ইশতিয়াকের ভূমিকাকে বিচার বিভাগের ভিত্তিভূমি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, নিহাদ কবির, মোস্তাফিজুর রহমান খানসহ দেশের শীর্ষ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান গবেষক ও আপিল বিভাগের আইনজীবী অরিফ খান। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
উল্লেখ্য, ১২ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। ২০০৩ সালের তিনি মারা যান। দেশের আইন অঙ্গনে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন ব্যারিস্টার ইশতিয়াক। তিনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুই দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে এবং ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নিজের পেশাগত জীবনে নিরপেক্ষতা ও নিষ্ঠার জন্য সুপরিচিত ছিলেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক চিন্তাধারা কখনও তার কাজের পথে প্রভাব ফেলেনি। তারই ছেলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।