ঢাকা: দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’। স্টারলিংকের এই যাত্রার মাধ্যমে দেশের দুর্গম পাহাড় অঞ্চল বা ব্রডব্যান্ড-বঞ্চিত সীমান্ত কিংবা চরের জনপদ যেখানে এখনো ফাইবার অপটিক পৌঁছেনি, সেখানে উন্মোচিত হয়েছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বোর্ডরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই যাত্রা শুরুর ঘোষণা আসে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দিতে শুরু করেছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয় বরং আমাদের দেশের ডিজিটাল কাঠামোর জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৮ জুলাই থেকে এই ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশি হোলসেলার নিযুক্ত হলো বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড। এ ছাড়াও বর্তমানে মালয়েশিয়া থেকে স্টারলিংকের সেবা ব্যবহার করতে হলেও আগামী ৩০ দিনের মধ্যেই দেশে গেটওয়ে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে কোনো সরকারি যেনো ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে সেই আইন করা হচ্ছে। জটিলতার কারণে আইনটি তৈরিতে একটু সময় লাগছে।’
এর আগে, বিএসসিএল এর সঙ্গে বিটু বি চুক্তি করে স্টারলিংক। বিএসসিল এমডি ইমাদুর রহমান ও স্টারলিংক এর ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার চুক্তিতে সই করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে লরেন ড্রেয়ার বলেন, ‘১৮ বছর আগে স্পেস এক্স এ যোগ দেওয়ার সময় ছোট একটা পরিবেশ ছিল। এখন এখানে ১৫ হাজার কর্মী কাজ করে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য নজিরবিহীন সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘১৫০ দেশ ও অঞ্চলে স্টারলংক এর কার্যক্রম আছে। আপনাদের নেতৃত্ব নতুন প্রযুক্তিতে গ্রহণ করেছেন। উচ্চ গতির ইন্টারনেট এখন আর কল্পনা নয়। ক্রিটিক্যাল অ্যান্ড রিলায়েবল লাইফ লাইন যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ঘটনায়।’
লরেন বরেন, ‘আমরা শুধু স্যাটেলাইট চালু করছি না, টেলিমেডিসিন, শিক্ষাসহ নানান সুবিধার নতুন দুয়ার উন্মোচন করছি। অন্যদের জন্য অনুকরণীয় জাতি আপনারা। নিজেদের জীবনের উন্নয়নে মানুষ স্টারলিংক ব্যবহার করবে। এ দেশের মানুষ স্টারলিঙ্গ ব্যবহার করে কিভাবে তাদের জীবনযাত্রার বৈপ্লবিক পরিবর্তন করছে, সেটি দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি।‘
আন্তর্জাতিক কৌশল ও সরকারি সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথসরিচার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস খুবই দারুণ ছিল। নতুন ব্যবসা উদ্যোগগুলোকে বাংলাদেশ গ্রহণ করছে।’
লিখিত বক্তব্য পাঠে ফয়েজ ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘এক বছর আগে ঠিক আজকের দিনে বাংলাদেশ ডিজিটাল ডার্কনেস এ পড়েছিল। আজ নতুন শুরু করলাম। স্টারলিংক এর মাধ্যমে পরিষ্কার বার্তা দিতে চাই যে বিশ্বের সঙ্গে আমাদের জনগণের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দুঃসাহস যেন আর কেউ না করে। নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট শুধু একটা সুবিধা না, অধিকার। স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানে থাকবে, বিশেষ করে দূরবর্তী তৃণমূল এলাকায়। আজ বাংলাদেশ কানেক্টেড এবং এটা আর কখনও ডিসকানেক্টেড হবে না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) জহিরুল ইসলাম, বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী ও আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইমাদুর রহমান, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম হোসেন সে সময় উপস্থিত থাকবেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।