চট্টগ্রাম ব্যুরো: লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের ‘সিদ্ধান্ত’ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
শনিবার (১৯ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, উত্তর জেলার সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, ঐক্যমতের কথা বলা হচ্ছে, সব ঠিক আছে, সেখানে যতটুকুতে ঐক্যমত্য হবে তার বাইরে সময় নষ্ট না করে, লন্ডনে আমাদের তারেক রহমানের সঙ্গে ড. ইউনূসের যে মিটিং হয়েছে, সেখানে আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম, সেই মিটিং অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো পথ নেই।’
‘কারণ বাংলাদেশের মানুষ একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়, একটি সহনশীল বাংলাদেশ চায়, পরস্পর সম্মানবোধের জায়গায় যেতে চায়, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায়। বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। সুতরাং একটাই পথ, দ্বিতীয় আর কোনো পথ নেই, দেশের মালিকের ভোটে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার, এর কোনো ব্যতিক্রম নেই।’
নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও আমি মনে করি, আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধভাবে সেই নির্বাচনকে সফল করার জন্য, একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমাদের সকলকে মিলে কাজ করতে হবে। আসুন, সবাই মিলে আমরা আগামীদিনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিই।’
নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে কেউ যদি সরে দাঁড়াতে চায়, তাদের মেসেজ দিতে হবে- বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়, বাংলাদেশের মানুষ তার দেশের মালিকানা ফিরে পেতে চায়। আর আপনারা যারা গণতন্ত্র চান না, তাদের তো কেউ রাজনীতি করতে বলেনি। আপনারা যারা ভোট চান না, তাদের রাজনৈতিক দল করার দরকার কী! নির্বাচন করবেন না, আবার বলবেন আমি রাজনৈতিক দল, জনগণের কাছে যেতে চাইবেন না, আবার বলবেন আমি রাজনৈতিক দল, তো আপনি রাজনৈতিক দল হলে তো জনগণের কাছে যেতে হবে। এটাই তো রাজনীতি।’
‘বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য। সুতরাং আমাদের নির্বাচনের দিকেই যেতে হবে। মানুষ যদি বিএনপিকে ভোট দেয়, তাহলে দেবে, আর না দিলে যাকে ভোট দেয় সেটা আমরা মেনে নেব, কিন্তু নির্বাচন হোক। আমরা আমাদের সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি আমার নাগরিক অধিকার ভোগ করতে চাই।’
মানুষের প্রত্যাশা-আকাঙ্খাকে ধারণ করে রাজনীতি করার তাগিদ দিয়ে বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা বদলে গেছে, আকাঙ্খা বদলে গেছে। সেটা ধারণ যদি কোনো রাজনৈতিক দল করতে না পারে, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব করতে না পারে, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে নেই, আমি বলে দিলাম। ওটা ধারণ করে মানুষের প্রত্যাশা, মানুষের আকাঙ্খা পূরণে নতুন রাজনীতি করতে হবে।
‘ওই যে বক্তৃতার পর বক্তৃতা কেউ শুনবে না। মানুষের সময়ের মূল্য আছে, এটা সবাইকে বুঝতে হবে, রাজনীতিবিদকে বুঝতে হবে, শিক্ষককে বুঝতে হবে, সবাইকে বুঝতে হবে। এই যে পরিবর্তনের রাজনীতি সেই রূপরেখা আমাদের তারেক রহমান সাহেব দিয়েছেন। সেই পরিবর্তনের আশা আছে বলেই রাজনীতিতে আছি। না হলে, আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি, আমার তো অবসরে যাওয়া দরকার, রাজনীতি করার দরকার কী! কিন্তু আগামীদিনে নতুন বাংলাদেশের যে রূপরেখা, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার যে আকাঙ্খা, ওই আশা থেকেই এখনও রাজনীতিতে আছি।’
নির্বাচিত সরকার ছাড়া মানুষের কাঙ্খিত পরিবর্তন আসবে না জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘সেই পরিবর্তনের জন্য একটা নির্বাচিত সরকার তো লাগবে। ইন্টেরিম সরকার তো আর এগুলো করার জন্য আসেনি, আসার কথাও না, আমি তাদের দোষও দেব না। এটা একটা অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের কাজ হচ্ছে কিছু নির্বাচনি সংস্কার করে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করা। যে পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক অর্ডার চালু হবে, আমরা যাদের দেশের মালিক বলে থাকি, সেই মালিকের ভোটে নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে, সেই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। এখন তো সেটা নেই।’
‘আমি তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দোষ দিচ্ছি না। তারা তো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়, এটা তাদের সীমাবদ্ধতা। সুতরাং তাদের দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে তার মালিক জনগণের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে চলবে। পরিবর্তন কী হবে, এদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।’
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন। সংগঠনটির চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মো. সেলিম ভূঁইয়া ও চট্টগ্রামের সভাপতি এম এ ছফা চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি বক্তব্য দেন।