জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস পালন উপলক্ষ্যে ও শহিদদের স্মরণে দেশব্যাপী ‘এক শহিদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) নোয়াখালী, পঞ্চগড়, ফরিদপুরসহ বেশ কয়েক জেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
পঞ্চগড়:
জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্ক চত্বরে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুমন চন্দ্র দাশ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আদম সুফি, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান, সহকারী কমিশনার আমিনুল হক তারেক, জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও সেবামূলক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
গণঅভ্যুত্থাণে শহিদ সাজু ইসলামের নামে নিম গাছ, শহিদ আবু সাঈদের নামে কাজুবাদাম গাছ, শহিদ সাগর রহমানের লটকন গাছ, শহিদ সাজু ইসলামের নামে জারুল গাছ ও শহিদ শাহাবুল ইসলাম শাওনের নামে হরীতকী গাছ রোপন করা হয়৷
আয়োজকরা বলেন, ‘এই কর্মসূচি কেবল পরিবেশ রক্ষার প্রয়াস নয়, বরং শহিদদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। শহিদরা আমাদের কাছে কেবল ইতিহাসের চরিত্র নন, তারা আদর্শের বাতিঘর।’
নোয়াখালী:
নোয়াখালী পৌর এলাকার সোনাপুর ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ। কর্মসূচিতে সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালী।
এ সময় আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ২০ জুলাই রাজধানীর মহাখালীতে শহিদ মো. মামুন হোসেনের স্মরণে কলেজ প্রাঙ্গণে একটি বৃক্ষরোপণ করা হয়। একইভাবে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে জেলার বেগমগঞ্জের নয়জন, সোনাইমুড়ীর ছয়জন, নোয়াখালী সদরের ছয়জন, হাতিয়ার দুইজন, চাটখিলের একজন, সেনবাগের একজন ও কোম্পানীগঞ্জের একজনসহ ২৬জন শহিদের স্মরণে ২৬টি বৃক্ষরোপণ করা হয়।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন শহিদদের পরিবারের সদস্যরা, উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকে।
ফরিদপুর:
গোয়ালচামুট পুরাতন বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন একাত্তরের শহিদ স্মৃতিস্তম্ভের চত্বরে ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানকালে জেলায় ও দেশের বিভিন্ন স্থানে শহিদ সদস্যদের স্মরণে বৃক্ষরোপন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. সোহরাব হোসেন, পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, সিভিল সার্জন মাহমুদুল হাসান, জেলা বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভুইয়া, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) এক নম্বর যুগ্ম সমন্বয়ক এস এম জাহিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক নাইমুল ইসলাম, মুখপাত্র জেবা তাহসিন, এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপন করেন। পরে শহিদদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয় ।
নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ‘এক শহীদ, এক বৃক্ষ’ কর্মসূচির আওতায় জুলাই বিপ্লবে জেলার ২১ জন শহিদের স্মরণে ২১টি বকুল গাছ রোপণ করেছেন।
এদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বনায়ন বিভাগের যৌথ আয়োজনে শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ চত্বরে এই ব্যতিক্রমধর্মী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এই সময় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বকুল ফুলের সৌরভের মত বিকশিত হয়ে তাদের উদ্দেশ্যকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করব, কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। আমরা শহিদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ জেলায় জুলাই বিপ্লবে ২১ জন শহিদের স্মৃতি রক্ষায় ও জুলাই পুনর্জাগরণের অংশ হিসেবে ২১টি বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।’
তিনি জেলা প্রশাসনের সকল আয়োজনে শহিদ পরিবার পাশে থাকায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম। এর আগে তিনি জুলাই বিপ্লবে শহিদ পরিবারের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। তাদের খোঁজখবর নেন এবং সর্বদা তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহিদ মাহমুদুর রহমান খানের স্ত্রী ও সন্তান, শহিদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা, শহিদ শফিকুলের মা, শহিদ মো. স্বজনের ভাই, শহিদ মো. সাইফুল হাসানের মা, শহিদ মো. মহসিনের স্ত্রী ও সন্তানসহ শহিদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাবেদ আলম এবং সামাজিক বন বিভাগ নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা।