Sunday 20 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
দেশজুড়ে কারফিউ ও সেনাটহল জোরদার, এদিন নিহত ৩৭

ফারহানা নীলা,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২৫ ০৮:০৪ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫ ২৩:৫৩

জুলাইয়ের দিনলিপি। ১৯ জুলাই ২০২৪। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২০২৪ সালের ২০ জুলাই (শনিবার) সকালটিকে অনেকেই তাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেন। ২০ জুলাই ভোরের আলো ফোটার আগে ঢাকাজুড়ে ছিল থমথমে নিস্তব্ধতা। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতা ভাঙে কাঁদানে গ্যাস, গুলির শব্দ আর মানুষের আর্তনাদে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণ যেন গোটা দেশে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়।

কারফিউ ঘেরা রুদ্ধ সকাল

১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টায় প্রথম দফায় কারফিউ জারি করে সরকার। জননিরাপত্তায় জারি করা কারফিউ কেউ অমান্য করলে এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হবে বলে ডিএমপি’র গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এর পর থেকে দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট, যানবাহন চলাচল, এমনকি রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রগুলোর দোকানপাটও। সরকার অবশ্য একে জননিরাপত্তার স্বার্থে নেওয়া পদক্ষেপ বলে দাবি করে। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সেই দিনটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩৭ জন প্রাণ হারান।

বিজ্ঞাপন

বিক্ষোভের আগুন ছড়ায় ঢাকা থেকে সারাদেশে

ঢাকার মিরপুর, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, মেরুল বাড্ডা, উত্তরা— প্রতিটি এলাকায় আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হয় পুলিশ। কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, এমনকি সরাসরি গুলিবর্ষণ চলে। বিশেষ করে উত্তরা ও সিদ্ধিরগঞ্জে পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। উত্তরার হাইওয়ে পুলিশ সদর দফতরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা, সিদ্ধিরগঞ্জে ফাঁড়িতে আগুন, রেললাইন অবরোধ— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সরকার বনাম আন্দোলনকারী: দোষারোপের রাজনীতি

সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের নয়, বরং বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।’ অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের দাবি, সংঘর্ষে প্রকৃত ছাত্রদের কোনো দায় নেই।

আলোচনার টেবিলে শিক্ষা, রাস্তায় ঝরে রক্ত

এদিন গভীর রাতে মিন্টো রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের মন্ত্রীরা। এ সময় তারা সরকারের কাছে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই আট দফা দাবি মানলেই কেবল কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি বিষয়ে আলোচনা করতে সম্মত হবে বলে জানান তারা। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি করেছেন, তা যৌক্তিক এবং সমাধানযোগ্য।’ তবে রাতের এই আলোচনার আগেই, রাস্তায় ঝরে গেছে অনেক তরুণ প্রাণ। এই রক্ত আর বারুদের গন্ধই হয়তো চিরকাল ২০ জুলাইকে মনে করিয়ে দেবে।

জাতি যখন স্তব্ধ, শহর তখন স্নায়ুযুদ্ধের মঞ্চ

২০ জুলাইয়ের এই দিনটিতে রাজধানীর আকাশে হেলিকপ্টারের শব্দ বারবার ফিরে আসে। র‍্যাবের নজরদারি, সেনাবাহিনীর টহল, পুলিশের চেকপোস্ট— সব কিছু যেন এক শীতল অথচ ভয়াবহ বাস্তবতার ইঙ্গিত দেয়। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ঠেকাতে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাজধানীর বঙ্গভবন, গণভবন, বেতার ভবন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অধিদফতর, সাব-অফিস, থানা ভবন, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন, সারাদেশের কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ চেকপোস্ট বসায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে কারফিউ পাস নিয়ে জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাইরে বের হতে হয়। পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ ২১ জুলাই থেকে সারাদেশে পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।

ইতিহাসের আরেক রক্তাক্ত অধ্যায়

২০২৪ সালের ২০ জুলাই শুধু একটি তারিখ নয়, এটি একটি প্রজন্মের আর্তনাদ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা বিক্ষোভ, কারফিউ, সংঘর্ষ, মৃত্যু ও দমন-পীড়নের এক কঠিন দলিল এই দিন।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

১৯ জুলাই ২০২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর কারফিউ জুলাইয়ের দিনলিপি বন্ধ ইন্টারনেট সেনাটহল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর