ঢাকা: প্রতিবছর নিয়মিত দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হলেও বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ ক্রমশ: বাড়ছেই। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত মার্চ শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত (অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি) ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা (মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ) এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা (মোট ঋণের ৪২ শতাংশ)।
অতি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে। এছাড়া ইতোপূর্বে প্রকাশিত তিনটি অর্থবছরের চূড়ান্ত ঋণ স্থিতির হিসাব সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত হিসাবে তিনটি অর্থবছরেই পুঞ্জিভূত ঋণ স্থিতি পূর্বের তুলনায় বেড়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের মোট পুঞ্জিভূত ঋণ স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২৪-মার্চ ২০২৫) সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা (৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ)।
সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। গত মার্চ শেষে এর স্থিতি দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেজারি বন্ড ও স্পেশাল ট্রেজারি বন্ড থেকে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা; ট্রেজারি বিল থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা; বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৪ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ও ‘সুকুক’ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংক-বহির্ভূত খাত থেকে মোট গৃহীত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস (জিপিএফ) থেকে ৭৬ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ এর মতে, সরকারের ঋণ বাড়লেও এটি এখনো ঝুঁকিসীমার অনেক নীচে রয়েছে। বৈদেশিক ও সামগ্রিক ঋণ ঝুঁকির ক্ষেত্রে ‘নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে। তবে ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখনো সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বৈদেশিক ঋণ-রফতানি অনুপাত ১৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং রফতানির তুলনায় এর মূলধন ও সুদ পরিশোধের চাপ আগামী দিনে বৈদেশিক ঋণের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এর উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে এবং পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সৃষ্ট চাপের কারণে মধ্য মেয়াদে ঋণ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে ঝুঁকি মোকাবিলায় আগাম ও কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক খাতে সংস্কার অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ।
সার্বভৌম গ্যারান্টি: অর্থ বিভাগ জানায়, এর বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের দেশি-বিদেশি গৃহীত ঋণের বিপরীতে সরকার প্রদত্ত সার্বভৌম গ্যারান্টি বা দায় রয়েছে। গত মার্চ শেষে এ ধরনের গ্যারান্টির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির পরিমাণ ৬৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টির পরিমাণ ৫২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
গত ২০২৪ সালের জুন শেষে সরকারের গ্যারান্টির স্থিতি ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৯ মাসে গ্যারান্টির পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।
সংশোধিত ঋণ স্থিতি: অর্থ বিভাগের সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, গত ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সরকারের পুঞ্জিভূত মোট (অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক) ঋণ স্থিতি ছিল যথাক্রমে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা (আগের হিসাবে ছিল ১৩,৪৩,৭২৩ কোটি টাকা, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৭২০ কোটি টাকা); ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা (আগের হিসাবে ছিল ১৬,১৭,৩১৩ কোটি টাকা, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা) এবং ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা (আগের হিসাবে ছিল ১৮,৩২,২৮২ কোটি টাকা, ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা)।