বান্দরবান: বান্দরবানসহ পার্বত্যাঞ্চলের প্রতি চরম অবমাননাকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ এনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে বান্দরবান জেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সারজিস ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বান্দরবানে তার উপস্থিতি এনং এনসিপির সব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলার ছাত্র নেতারা।
রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে বান্দরবান প্রেসক্লাবে ‘ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বান্দরবানের ছাত্র নেতারা।
ছাত্র নেতারা বলেন, গত ৩ জুলাই পঞ্চগড়ে জুলাই পদযাত্রা চলাকালে এনসিপি নেতা সারজিস আলম এক বক্তব্যে বান্দরবানকে ‘শাস্তিস্বরূপ চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাঠানোর জায়গা’ হিসেবে মন্তব্য করেন। এই মন্তব্য চরম নিন্দনীয়, অবমাননাকর।
তারা বলেন, একজন নেতার মুখে এ ধরনের কটূক্তি একটি জেলার মর্যাদাকে হেয় করার পাশাপাশি পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও অবহেলার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
ছাত্র সমাজের নেতারা আরও বলেন, এ মন্তব্যের বিষয়ে আমরা স্থানীয় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেন, ১৯ জুলাই বান্দরবানে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানে সারজিস জনসম্মুখে ক্ষমা চাইবেন। তখন আমরা কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে না গিয়ে শান্ত থেকেছি। তবে সারজিস উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিতই ছিলেন না এবং দলের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। অনুষ্ঠান শেষে আমরা মঞ্চে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি আবারও অবগত করালেও তারা কর্ণপাত না করে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন।
তারা আরও বলেন, ছাত্র সমাজ, সারজিসের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। বান্দরবান কোনো বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চল নয়-এটি জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এক জনপদ। এখানকার মানুষ শান্তিপ্রিয়, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও অধিকার সচেতন। এই জেলার মর্যাদাকে অপরাধীদের শাস্তির স্থান হিসেবে উল্লেখ করা মানে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে অপমান করা।
সংবাদ সন্মেলনে ছাত্র নেতা আসিফ ইসলাম বলেন, সারজিস ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বান্দরবানে এনসিপির সকল কার্যক্রম ও তার উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণ করা হলো। যেসব সরকারি কর্মকর্তা ‘শাস্তিস্বরূপ বদলি’ হিসেবে বান্দরবানে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘বিপজ্জনক’ বা ‘চাঁদাবাজ’, ‘দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জায়গা’ হিসেবে উপস্থাপন রোধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি আসিফ ইকবাল বলেন, বান্দরবানকে অবজ্ঞা করা মানে আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। অবমূল্যায়ন বা অবমাননা করা হলে আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবো। কোনো দলের নেতা যদি জনপদের সম্মানহানি করেন, তাকে মেনে নেওয়া হবে না।
আসিফ ইকবাল আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই বান্দরবানকে অবমূল্যায়ন বা অবমাননা করা হলে আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি আসিফ ইকবাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, সহসভাপতি মাহির ইফতেখার, আমিনুল ইসলাম, খালিদ বিন নজরুল, হাবিব আল মাহমুদ, জুবায়ের হোসেন, রাশেদুল ইসলাম, হাসান আল বান্না, জয়নাল আবেদীন, তারেকুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।