ঢাকা: ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম দেশ ও জাতির স্বার্থে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন অফিসের কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এই ‘অভিশপ্ত কার্যালয়’ স্থাপনের অনুমতি বাতিলের আহ্বান জানান। অন্যথায়, দেশকে বাঁচাতে রাজপথে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
রোববার (২০ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘‘বিশ্ব বাস্তবতায় জাতিসংঘ একটি ব্যর্থ সংস্থায় পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনে লাখো মানুষের মৃত্যু রোধে জাতিসংঘের ব্যর্থতা এই সংস্থাকে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলেছে। ইয়েমেনে, আরাকানে এবং আফ্রিকা অঞ্চলে মানবাধিকারের চুড়ান্ত লঙ্ঘন হয়েছে জাতিসংঘের চোখের সামনে। বাংলাদেশের মতো একটি শান্ত ও নিরাপদ দেশে এমন ব্যর্থ একটি সংগঠনের একটা কমিশনের কার্যালয় খোলার কোনো কারণও নাই, দরকারও না; বরং বিপদ আছে। তাই দেশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ বিবেচনায় ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পরে ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূস সরকারের প্রতি আমরা সমর্থন জানিয়েছি ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা, সংস্কার কার্যক্রমে সমন্বয় করা এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করার জন্য। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে প্রশ্নাতীত সমর্থন করেছি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সরকার তার মূল কাজ বাদ দিয়ে তার ম্যান্ডেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজ করে যাচ্ছে। বিচারে কোনো অগ্রগতি নাই, সংস্কারের কাজ থমকে আছে, আর দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনের পরে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সরকার সেই দিকে নজর না দিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের অফিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে।’’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘‘মানবাধিকারের সংজ্ঞা নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে আমাদের ভিন্নমত আছে। আমাদের হাজার বছরের বোধ-বিশ্বাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক বিষয়কে এরা মানবাধিকার বলে গণ্য করে। সমকামীতা, গর্ভপাত, ট্রান্সজেন্ডার, মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করার মতো বিষয়কে তারা মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে অথচ এগুলো আমাদের সমাজ বাস্তবতায় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমাজ-দর্শনে ও বিশ্বাসে অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া এই বিষয়গুলোকে তারা মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত করে সমাজে এগুলো স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করবে। সমাজ থেকে কোনো বাধা আসলে তারা আমাদেরকে জাতি হিসেবে মানবাধিকারের বিরোধী বলে প্রতিবেদন করবে। ফলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। বিদেশি পর্যাটক আসা কমে যাবে। আমাদের নাগরিকদের সারা বিশ্বে ভীতিকর হিসেবে দেখানো হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদেরকে বর্বর জাতি হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। ডক্টর মুহাম্মাদ ইউনূসকে আমরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সমর্থন করেছি কিন্তু তিনি জাতির বুকে এমন ভয়ংকর বিষবৃক্ষ রোপন করে যাচ্ছেন যার ভয়াবহ পরিণতি আমাদেরকে দীর্ঘ সময় ভোগ করতে হবে।’’
সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘‘আমরা সরকারের অভিলাষ নিয়ে শংকিত। বিদেশি সংস্থা এমনকি স্বয়ং জাতিসংঘের অফিসের জন্য প্রযোজ্য সুবিধার চেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করে কেন এই কমিশনকে অফিস দিতে হবে তা আমাদের বুঝে আসে না। এই অফিসের কর্মকৌশল কী? লক্ষ কী? কর্মনীতি কী? ইত্যাদির কোনো কিছুই আমাদের সামনে পরিস্কার না। বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে না। কোনো ধরনের জাতিগত হানাহানিও নাই। ফলে কোন বিবেচনাতেই এই অফিসের প্রয়োজন নাই। তাই অবিলম্বে এই অভিশপ্ত কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি বাতিল করতে হবে। অন্যথায় দেশকে বাঁচাতে আমাদের রাজপথে অবস্থান নিতে হতে পারে।’’