Sunday 20 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাজতখানা যেন ‘ছোট্ট কেবিনেট’, খোশগল্পে মাতলেন সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা!

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২৫ ২২:২২ | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ২২:৫২

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: মাস কয়েক আগেও ছিলেন ‘রাজসিংহাসনে’। ছিল রাজকীয় বাহন আর উচ্চস্তরের সুরক্ষাও। কিন্তু ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গেল ৫ আগস্ট পাল্টে যায় গোটা দৃশ্যপট। বর্তমানে জুলাই গণহত্যার দায় নিয়ে কারাগারেই দিন কাটছে ডজনখানেকেরও বেশি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর। এমনকি সাধারণ বন্দির মতোই প্রিজনভ্যানে চড়ে আসতে-যেতে হয় আদালতে। আর হাজতখানায় আনলেই যেন প্রাণ ফিরে পান একসময়ের দোর্দণ্ড এসব প্রতাপশালীরা। মেতে ওঠেন খোশগল্পেও। আদালতের হাজতখানাই যেন ছোট্ট কেবিনেট।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক সাত মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল রোববার (২০ জুলাই)। এদিন সকাল ১০টার পর সাবেক ১৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনে পুলিশ। কড়া নিরাপত্তায় কাশিমপুর-কেরানীগঞ্জ আর নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে তাদের আনা হয়। প্রিজনভ্যান থেকে একে একে নামিয়ে নেয়া হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়। ক্ষমতায় থাকতে নিজেদের কথায় ওঠবস করা পুলিশ সদস্যরাই তাদের হাতে হাতকড়া আর মাথায় হেলমেট পরিয়ে আনা-নেওয়া করেন।

বিজ্ঞাপন

ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর পাশেই চেয়ারে বসেছিলেন আরেকমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। পাশাপাশি ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডা. দীপু মনিসহ অন্যান্য হেভিওয়েট মন্ত্রীরা। বিভিন্ন মামলার আসামি হলেও তাদের মুখে কোনো চিন্তার ভাঁজ ছিল না। পায়ের ওপর পা তুলে বিভিন্ন কথাবার্তা নিয়ে হাসাহাসি করতে দেখা যায় তাদের। ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলার পরও ছিলেন অনেকটা উৎফুল্ল। পুরো সময়টাই একে অপরের সঙ্গে গল্প করতে দেখা যায়।

বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে অভিযুক্তদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। প্রথমেই লাঠি ভর করে ট্রাইব্যুনালের কাঁচঘেরা কাঠগড়ার ঠিক সামনের সারিতে চেয়ারে বসেন কামরুল ইসলাম। তার ডানপাশে বসেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আর বাম পাশে ছিলেন আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।

মাঝের সারিতে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাংগীর আলম, হাসানুল হক ইনু ও গোলাম দস্তগীর গাজী। পেছনের সারির চেয়ারে ঠিক ডানপাশেই ছিলেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তার বামে বসেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। এর মধ্যে কেউ কেউ পুলিশের সহায়তা নিয়েই কাঠগড়ায় ওঠেন।

কাঠগড়ায় উঠেই নিজের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন হাসানুল হক ইনু। এমনকি বারবার কাকে যেন খুঁজছিলেন সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরে আসা সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল উঠলে ইনুর হয়ে কথা বলার অনুমতি চান আইনজীবী আবুল হাসান। ঠিক একই সময় বিচারপতির উদ্দেশে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে ইনুও বলে ওঠেন ‘আমার কিছু বলার আছে। অনুমতি দিলে আমি বলব।’

এক পর্যায়ে অনুমতি পেয়ে এই জাসদ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ মামলায় অভিযুক্ত। মামলাটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। কিন্তু জুন মাসে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আমার স্বর পরীক্ষা (ভয়েস রেকর্ড) করেন কয়েকজন ডিবি কর্মকর্তা। ভয়েস টেস্টের সময় আমাকে আদালতের কোনো আদেশ দেখানো হয়নি। এটি একটি চক্রান্ত। অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা আমার কণ্ঠ পরীক্ষা করেছেন।’

এ সময় তার অভিযোগ নাকচ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের অনুমোদন নিয়েই ইনুর কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যেকোনো আসামির ভয়েস পরীক্ষা করা যেতে পারে। এটি তদন্তের স্বার্থেই করা হয়। মূলত অন্য কণ্ঠের সঙ্গে মেলানোর জন্য পরীক্ষাটি করা হয়। ইনুর ক্ষেত্রেও সেটিই করা হয়েছে। তবে আদালতের আদেশ দেখানোর কোনো এখতিয়ার নেই।’

তিনি বলেন, ‘আসামি বারবার নিজের পক্ষ থেকে কথা বলে বিচারকাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। অথচ তার আইনজীবী রয়েছেন। মামলার এ সময়ে আসামিদের কথা শুনলে বিচারে বিঘ্ন ঘটবে। এটি একধরনের বিরক্তিকর।’ চিফ প্রসিকিউটরের এমন কথায় চিৎকার দিয়ে ‘নো নো’ বলে ওঠেন সাবেক হেভিওয়েট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।

এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনে আইনজীবীর পাশাপাশি আসামি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের কথাও শুনব। দুয়েক মিনিটে তেমন একটা ক্ষতি হবে না।’ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের এমন কথার সমর্থন জানিয়ে কাঠগড়ায় থাকা সমস্বরে ‘ইয়েস ইয়েস’ বলেন আসামিরা।

মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক এ সাত মামলায় মোট ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে আগামী ১৫ অক্টোবর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও রয়েছেন। তবে তিনি পলাতক। হাসপাতালে থাকায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে আজ আনা হয়নি। এ ছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ায় এ মামলার আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আনেনি পুলিশ।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খোশগল্প ছোট্ট কেবিনেট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হাজতখানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর