আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার চলতি সফরে প্রতিরক্ষাখাতে সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি এবং আরো তিন থেকে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এই লক্ষ্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে আগামী ১১-১৩ আগস্ট দেশটিতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার সফর নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করছে। তারিখ চূড়ান্ত হলেও এখনো কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
জানা গেছে, ড. ইউনূসের কুয়ালালামপুর সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি এবং চারটি সমঝোতা স্মারক সই করতে চায় মালয়েশিয়া। যার মধ্যে জ্বালানি খাতে একটি সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে এটি না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে সেমিকন্ডাক্টর, ফরেন সার্ভিস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা বিআইআইএসএস এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
নাম না প্রকাশ শর্তে সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জুলাইয়ে প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরের কথা ছিল। তবে জুলাইয়ে নানা ব্যস্ততার কারণে মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করে আগস্টে সফর নেওয়া হয়েছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর হবে। আমরা আশা করছি, এটি একটি ভালো সফর হবে। সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এখনো অনেক সময় বাকি। এ ধরনের ভিভিআইপি ভিজিটে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হয়।’
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ‘বন্ধু’ আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ড. ইউনূস। পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর এবং বন্ধুর আতিথেয়তায় প্রধান উপদেষ্টার সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে। দুই সরকারপ্রধান সম্পর্কের দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে, শ্রমবাজার, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমার ইস্যু, কৃষি, জ্বালানি, শিক্ষা, হালাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গেল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস পর অক্টোবরে ঢাকা সফর করেছিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ওই সফরটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে কোনো বিদেশি সরকার প্রধানের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর।
সরকারের এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বছরে বাণিজ্য প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে চায় বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টার সফরে বাণিজ্য-বিনিয়োগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হতে পারে। শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা হবে। আশা করছি, ভালো কিছু হবে এই সফরে।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, আগস্টে প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়া যাবেন। এটি দ্বিপক্ষীয় সফর হবে।