ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তিনজন। ভর্তি রয়েছেন ৪৪ জন।
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান চিকিৎসকরা।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাতে আরও দুজন মারা গেছেন। তারা হলেন- শিক্ষার্থী আফনান ফাইয়াজ (১৪) ও শিক্ষিকা মাহরিন (৪৬)। এর আগে দুপুরে জরুরি বিভাগে মারা যান অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ (১৪)। তানভীর তুরাগ নয়ানগর শুক্রভাঙ্গা এলাকায় রুবেল মিয়ার ছেলে।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হারুনুর রশীদ বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বার্ন ইউনিটে মোট চারজন রোগী আসেন। এরমধ্যে জুনায়েত হাসান (১১) জরুরি বিভাগে মারা যান। তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এ হাসপাতালে দুইজন মৃত্যুবরণ করলেন। সেজন্য মৃত্যু বা আহতের সংখ্যার বিষয়টি সংখ্যায় খুব বেশি জোর না দিয়ে আমরা বুঝার চেষ্টা করি ঘটনাটির ভয়াবহতা। এখানে সব মিলে সাতটি হাসপাতালে এ রোগীরা ভর্তি আছেন। প্রাথমিকভাবে উত্তরা ওই অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে গিয়েছে। চূড়ান্তভাবে এখন প্রধানত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং সিএমএইচে রোগীরা ভর্তি আছেন। এখানে প্রাথমিকভাবে রোগীরা যা আসছিলেন, তারমধ্যে এ মুহূর্তে ভর্তি আছেন ৪৪ জন। এখানে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন।
তিনি বলেন, ‘এখান থেকে চারজনকে ঢামেকে পাঠানো হয়েছিল, তারমধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সিএমএইচে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন আছেন ২৫ জন। সবমিলে সংখ্যাটা ৮৮ জনকে আমরা নিশ্চিত করছি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আছেন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করছি আমরা ১৭ জন। যদিও কেউ ১৯-২০ বলছেন, এ সংখ্যাগুলো আমরা নিশ্চিত করছি না।’
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এখানে প্রধানত চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাদের যে দক্ষতা, এ প্রতিষ্ঠানের যে সামর্থ, দক্ষ চিকিৎসক, রক্ত, আনুসাঙ্গিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে। এখানে প্রায় ৯ জন রোগী আইসিইউতে ভ্যান্টিলেট অবস্থায় আছে। আরও অনেক ভ্যান্টিলেটর এখানে ও ঢাকা মেডিকেলে তাদের প্রয়োজন হলে প্রস্তুত করা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রক্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে অনেক মানুষের আবেগ জড়িত। অনেক মানুষ রক্ত দান করেছেন বা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রক্ত মূলত প্রয়োজন হবে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) থেকে। এই হাসপাতালে যারা এসেছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত আছে। তারপরেও আগামীকাল থেকে রক্তদানে আগ্রহীদের সংগ্রহ করা হবে।সত্যিকার অর্থে অতিরিক্ত রক্ত প্রয়োজন হবে না। এ হাসপাতালে সবচেয়ে জটিল রোগীরা আছে।’
তিনি বলেন, ‘ভেতরে কেউ প্রবেশ করবেন না। শুধুমাত্র ইনফেকশনের কারণে একটা বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। দোয়া করেন বাচ্চাগুলো বাঁচানোর জন্য আমরা যেন কোনো ভুল না করি। আমরা যেন আমাদের সামর্থের প্রয়োগ করতে ব্যর্থ না হই। ছোট্ট বাচ্চাদের জন্য দোয়া করেন। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি চিকিৎসকরা সার্বক্ষনিক থাকবেন।’
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘লোকজন যতো কম আসবেন ততোই আমাদের রোগীর জন্য ভালো হবে। ভিআইপিরা রোগীদের কাছে যাচ্ছেন না। শুধুমাত্র হাসপাতালের সার্ভিস প্রোভাইডার যাচ্ছেন। এই হাসপাতালের যে সক্ষমতা আছে, সে অনুযায়ী কোনো অভিভাবককে চিকিৎসার জন্য কোনোকিছুই বাইরে থেকে এ মুহূর্তে প্রয়োজন নাই। তাদের বাইরে থেকে সাপোর্ট দরকার নাই। অযথা যেন কেউ ভিড় না করে। স্বজনরা খোঁজ নিতে চাইবে, তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করতে পারি না।’
পরিচালক বলেন, ‘আমরা শুরুতেই বলেছি, বার্নের রোগীর জন্য সাধারণত প্রথমদিন রক্তের প্রয়োজন হয় না। যদি না আলাদা ইঞ্জুরি না থাকে। সেজন্য আমাদের আজকের রক্তের প্রয়োজন হবে না। ফ্রেস ফ্রোজেন প্লাজমা আগে নিয়ে রাখতে পারেন না। সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি আজকে রক্তের জন্য কেউ থাকবেন না। যারা দিতে চান রক্ত নাম-মোবাইল নাম্বার দিয়ে যেতে বলেছি, সে অনুযায়ী তাদেরকে ডাকা হবে। আমাদের ডাক দিলেই কেবল আপনারা আসবেন। অনুগ্রহ করে হাসপাতালের সামনে এসে ভিড় করবেন না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘পর্যাপ্ত আইসিইউর সিট না থাকার বিষয়টি সত্য নয়। আইসিইউতে এ মহূর্তে যে রোগীগুলা আছে, তাদেরকে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নরমাল ২০টা এইচডিইউ আছে। সবার জন্য জরুরি না। ২০টা ভেন্টিলেটর রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫০ শতাংশের মতো রোগী প্রাইমারি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছে। হয়তো প্রাইমারি এসেসমেন্টে আমার মনে হয়েছে ৪০ শতাংশ। রিঅ্যাভুলেশনে যাওয়ার পর এটা ৩০ এ যেতে পারে, ৪৫ এ ও যেতে পারে। বাকি যারা আছে ২০-১৫ শতাংশ রোগী যদি ক্রস ইনফেকশনের হয় যেকোনো সময় খারাপ হয়ে যেতে পারে। ৫ শতাংশ রোগীও অনেকসময় জীবনের আশঙ্কা থাকে। সে কারণে বার বার কথাটা বলছি, ভিড় কম করার জন্য।’