ঢাকা: অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং অতি সম্প্রতি সম্পাদিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিবছর ৭ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের আওতায় সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) দেশটি থেকে গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম দফায় ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হচ্ছে। বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটস’ কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ‘অ্যাগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড-এর মাধ্যমে ‘কোস্ট ইন্স্যুরেন্স ফ্রেইট-লাইনার আউট (সিআইএফ-এলও) টার্মে এ গম আমদানি বা কেনা হবে।
ইউএস হুয়েট অ্যাসোসিয়েটস (ইউএডব্লিউএ) হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গম শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সরকারি রফতানি বাজার উন্নয়ন সংস্থা এবং ইউএসডিএ’র সহযোগী অংশীদার।
সূত্র জানায়, আমদানিতব্য গমের ৬০ শতাংশ চট্রগ্রাম বন্দর ও ৪০ শতাংশ মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাস করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন (১০০০ কেজি) গম ৩০২ দশমিক ৭৫ ডলার হিসাবে এতে মোট ব্যয় হবে ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১২২.৭৫ টাকা হিসাবে)।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির বিষয়ে গত ৩০ জুন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের উপর বিদ্যমান ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে আরো ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অধিক পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব- এমন অভিমত ব্যক্ত করে চিঠিতে বলা হয়, এ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা হবে এবং প্রস্তাবিত শুল্ক কমাতে আলোচনায় বা দর কষাকষি করতে সহায়ক হতে পারে। সরকারি খাতে গম এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক উৎস থেকে গম সংগ্রহ করে থাকে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য বাজেটে অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। দেশের সরকারি মজুত বাড়িয়ে সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতে আমদানির ক্ষেত্রে বহুবিধ উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজতর এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা সম্ভব হয় বিধায় খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছর সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পদ্ধতি এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম সংগ্রহ করছে।