Tuesday 22 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিমান বিধ্বস্ত
হাসপাতাল এত দূরে কেন মা?— ছামীমের শেষ আকুতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ জুলাই ২০২৫ ২২:২৭

নিহত আব্দুল্লাহ ছামীম। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

শরীয়তপুর: মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ ১৩ বছর বয়সী ছামীম বাঁচার আকুতি জানিয়ে মাকে বলেছিল, ‘হাসপাতাল এত দূরে কেন মা? কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না? আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও।’ ছেলের বলা এই শেষ কথাগুলো বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা জুলেখা বেগম। গত ডিসেম্বরে প্রবাসে ছামীমের বাবা মারা যান। বাবার পর ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে পুরো এলাকা এখন শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে উপজেলার ডিএম খালী চরভয়রা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার প্রয়াত বাবা কালাম উদ্দিন মাঝির কবরের পাশে আব্দুল্লাহ ছামীমকে দাফন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

নিহত ছামীম শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিএমখালি মাঝিকান্দি এলাকার আবুল কালাম মাঝি ও জুলেখা বেগম দম্পতির ছেলে। গত বছরের ডিসেম্বরে ছামীমের বাবা আবুল কালাম মাঝি প্রবাসে মারা যান।

স্বজনরা জানান, ভাইবোনদের মধ্যে ছামীম ছিল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল অত্যন্ত মেধাবী। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। আগে মাদরাসায় পড়াশোনা করলেও পরবর্তীতে তাকে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সে মা, বোন ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে উত্তরার দিয়াবাড়ি খালপাড় এলাকায় থাকত।

প্রতিদিনের মতোই সোমবার (২১ জুলাই) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিল ছামীম। তখনই বিকট শব্দে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান বিদ্যালয়ের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে দগ্ধ হয় ছামীম।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছামীমকে উদ্ধার করে। স্বজনদের খবর দেওয়া হলে দ্রুত তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ছামীমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ছামীমের মৃত্যুর খবর তার গ্রামে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। ছামীমের এমন অকাল মৃত্যু স্বজনরা মেনে নিতে পারছেন না। ছেলের মৃত্যুতে মা জুলেখা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

আহাজারি করতে করতে মা জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার বাবা বলছিল হাসপাতাল এতো দূরে কেন? কাছাকাছি হাসপাতাল হতে পারে না? আমাকে তোমরা চিকিৎসা করাতে বিদেশে নিয়ে যাও। আমার বাবা বাঁচতে চাইছিল। কেন আমার বাবা এভাবে চলে গেল।’

ছামীমের মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার ভাগ্নে ভীষণ মেধাবী ছিল। ওর স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। বাবার মৃত্যুর পর আমরা সবাই ওকে আগলে রেখেছিলাম। আজ সে আমাদের ছেড়ে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত। ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আজ স্বপ্নই রয়ে গেল।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে ছামীমের মামা আরও বলেন, ‘বিমান প্রশিক্ষণের জন্য তো খোলা ময়দান রয়েছে। কিন্তু একটি ব্যস্ততম এলাকায়, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল, সেই জায়গায় কীভাবে বিমান প্রশিক্ষণের অনুমতি দেওয়া হলো? আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

ভেদরগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক বলেছেন, ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। নিহত ছামীমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আমরা সব সময় থাকবো।’

সারাবাংলা/এসআর

দাফন বিমান বিধ্বস্ত মাইলস্টোন স্কুল যুদ্ধ বিমান শরীয়তপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর