রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের জলিল মুন্সিপাড়া এলাকায় ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত পাঁচ দিনে পদ্মার ভাঙনে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার ৫০ বিঘা কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতায় শত শত পরিবার চরম আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফসলি পটল ও পাটক্ষেত দ্রুতগতিতে নদীতে বিলীন হচ্ছে। পাশেই থাকা ধানের জমিও ভাঙনের মুখে। এ ছাড়া, নদীভাঙনের কারণে কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ, স্কুল, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং কয়েকশো বাড়িঘর চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। জমিতে লাগানো পাট কাঁচা অবস্থায় কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন বেপারী বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি হলো দ্রুত ভাঙনস্থলে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে হলেও ভাঙন রোধ করা। ভাঙন না ঠেকালে স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, বাজার, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং শত শত বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। অনেক বাসিন্দা এর আগেও নদীভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে ভাঙলে তাদের আর দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না।’ তিনি ড. ইউনূস সরকারের কাছে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের জোর দাবি জানান।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা ফরিদ সরদার বলেন, ‘আমার পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি দুই বিঘা জমি হারালে আমার আর কিছুই থাকবে না। পরিবারের মুখে কী করে খাবার জুটাব, কী করব, কোথাই থাকব? ভেবে কুল পাচ্ছি না।’
পদ্মায় পাটখেত বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আজীজ সরদার বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল কুশেহাটা। আমার বাবার দেবগ্রাম, কুশেহাটা, ধুপাগাতিসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৫ থেকে ৫০ বিঘা জমি ছিল। আমাদের বসত বাড়ি, ফসলি জমি ২০১৮ সালে নদীতে ভেঙে যায়। তারপর এই দৌলতিযার মুন্সিপাড়াতে পরের জমিতে বাড়ি করে আছি। সর্বশেষ তিন বিঘা ফসলি জমি ছিল। সেখানে পাট চাষ করেছিলাম। গতকাল এর অনেকটা নদীতে বিলীন হয়েছে। আজ কৃষান নিয়ে কিছু কাটতেছি। শেষ যে সম্বলটুকু ছিল সেটাও এবার ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের এখন আর দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকবে না এটা ভেঙে গেলে।’
স্থানীয় কৃষক মোতাহার বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে ৮ থেকে ১০ বিঘা জমি ভেঙে গেছে। আরেকটি জমিতে আমি ধান লাগিয়েছিলাম। ধান গাছগুলো অনেক ভালো হয়েছিল। ঘরে ওষুধ, সার কিনে রেখেছি, দিচ্ছি না। কখন যেন এই জমিটুকু ভেঙে যায়। সার ওষুধ দিয়ে কী করব।’
স্থানীয় জুবায়ের, আজিজুল, মোতালেবসহ আরো কয়েকজন বলেন, ‘আমরা কয়েকবার ভাঙনের শিকার। রাতে ঘুম হয় না। মনে হয় কখন যেন ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে যাই। ছোটো বাচ্চা, বৃদ্ধ মা বাবা, পরিবার তাদের নিয়ে অনেক টেনশনে রয়েছি। এবার ভাঙলে কোথাই গিয়ে দাঁড়াব। সরকার যদি জিও ব্যাগ ফেলাত তাহলে হয়তো ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতাম।’
তারা আরও বলেন, ‘৭ দিনের ভেতর যদি নদীতে জিও ব্যাগ না ফেলে, তাহলে গ্রামবাসী মিলে ঢাকা-খুলনা হাইওয়ে অবরোধ করব।’
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার সরেজমিন পরিদর্শন করে জানান, যেখানে আগে ব্লক বা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল সেখানে ভাঙন দেখা যায়নি। বরং যেখানে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই সেখানেই কৃষি জমি ভাঙছে। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বর্ষাকালে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন। যতদ্রুত সম্ভব আমরা ভাঙ্গন রোধে কাজ করব।