রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন রংপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ায় ওই কমিটির সকল ধরনের কার্যক্রম পরবর্তী নিদের্শ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর ইমরান আহমেদকে আহ্বায়ক ও আশফাক আহমেদকে জামিলকে সদস্যসচিব করে ১৫৫ সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কমিটি স্থগিতের বিষয়ে আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্যসচিব আশফাক আহমেদকে জামিলকে ফোন করা হলে তারা কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনের পর থেকেই রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা। গত ১৮ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ১৬ জন নেতা পদত্যাগ করেন। এরও আগে ১৫ মে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের এক সদস্য রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা আদায় ও দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগ করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতারা সেসময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ জামিল আন্দোলনের আদর্শ ও মূল্যবোধকে অবমাননা করে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, মামলার তদবির, সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি ও ছাত্র-আন্দোলনের নামে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড করছেন।
এ বিষয়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করা মাহমুদুর রহমান লিওন বলেন, ‘সম্প্রতি রংপুর নগরীর ঘাঘট এলাকায় অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায় হাউজি জুয়ার আসর বসানো হয়। সেখান থেকে ৭ লাখ টাকা চাঁদা নেন জেলা কমিটির সদস্যসচিব আশফাক আহমেদ জামিল। পরে আহ্বায়ক ইমরান আহমেদের মাধ্যমে ঈদের আগে কমিটির অনেক সদস্য সেই টাকা ভাগাভাগি করে নেন।’
পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া এই নেতা অভিযোগ করেন, রংপুর সিটি করপোরেশনে নিয়োগ-বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা নেন নেতারা। এ ছাড়া পীরগাছায় নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ আটকে দেন জেলা কমিটির আরেক সদস্য রওশন জামিল। তার অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে না পারায় জেলা কমিটির নেতাদের নির্দেশে তিনি এই কাজ বন্ধ করে দেন।’
মাহমুদুর রহমান লিওন বলেন, ‘জেলা কমিটির নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে এর আগে অনেকবার প্রতিবাদ করেছি। এ জন্য আমাকে হুমকি, ভয়ভীতি দেখানো ও বহিষ্কারের ভয় দেখানো হয়েছে। একজন আদর্শনিষ্ঠ আন্দোলনের কর্মী হিসেবে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারি না। তাই কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির তৎকালীন আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ অবশ্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সেসময় বলেছিলেন, ‘মাহমুদুর রহমান লিওনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’