Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
মর্গ থেকে ৮৫টি মরদেহ হস্তান্তর, মেট্রোরেলের জন্য শেখ হাসিনার কান্না

ফারহানা নীলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:১০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১০:০৭

জুলাইয়ের দিনলিপি। ২৫ জুলাই ২০২৪। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ২৫ জুলাই ২০২৪। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই দিনটি যেন এক অনুচ্চারিত হাহাকার— যেখানে ক্ষোভ, কান্না আর কণ্ঠরোধের সমবেত সুর বাজে প্রতিটি শিক্ষার্থী, পরিবার, এমনকি পথচারীর চোখে-মুখে। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন সেদিন প্রবেশ করে নতুন এক সংকটময় অধ্যায়ে, যেখানে সংখ্যার হিসাবে ৫ হাজারের বেশি গ্রেফতার, ২০৩ জনের প্রাণহানি এবং রাষ্ট্রীয় শ্বাসরোধের চিত্র উঠে আসে। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল হাজারো মানুষের জীবনের ছিন্নভিন্ন গল্প।

ছাত্র নয়, যেন শত্রু

সেদিন শুধুই আর একটি তারিখ ছিল না। ছিল দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্ব শেষে সহিংসতার দৃশ্যমান বিস্ফোরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে শুরু। কিন্তু পরিণতি? রাজধানী ঢাকায় ২২০০-এর বেশি গ্রেফতার, মেট্রোরেল স্টেশনের কাঁচ ভাঙা, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাস, অচল রাস্তাঘাট, অকার্যকর জীবনচক্র। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন— ‘এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি কেবল প্রজ্ঞাপনে নয়। আমরা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা, গুম, হত্যার বিচার চাই।’

বিজ্ঞাপন

স্বজন হারানোর ক্ষত

২৫ জুলাইয়ের আগেও নিহত হয়েছিলেন অনেকেই। তবে এই দিনে চিকিৎসাধীন আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর আসে। ঢাকা মেডিকেল মর্গ থেকে ৮৫টি মরদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের হাতে। বাকিদের বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। গণমাধ্যমে শোক আর ক্ষোভ একসঙ্গে মিশে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের জন্য কান্না শেখ হাসিনার

এদিন সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক পর্যায়ে স্টেশনের ধ্বংসলীলা দেখে কেঁদে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে বিচার চাইছি। কোটা আন্দোলনের নামে এ তাণ্ডব যারা করেছে, তাদের বিচার দেশবাসীকে করতে হবে।’

একদিনের জন্য খোলা শহর

কারফিউর ষষ্ঠ দিনে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয় অফিস-আদালত। রাস্তা কিছুটা সচল, কিন্তু ছিল চেকপোস্ট, সেনা টহল, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। মানুষ মুখোশে নয়, মুখে আতঙ্ক ঢেকে পথে বেরিয়েছে।

প্রবাসে বিক্ষোভকারীদের তথ্য চেয়ে দূতাবাসে চিঠি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের

কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সৃষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি, স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ নানা কারণে উদ্বিগ্ন প্রবাসী এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করেন তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্মেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এদিকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ‘জরুরি নন’, এমন কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই দিনেই জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত পর্যন্ত বিবৃতি দেয়। পুলিশের ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ সমালোচনা করে অ্যামনেস্টি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া উচিত।’

পরীক্ষা স্থগিত

এইচএসসির ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই এবং ১ আগস্টের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। প্রার্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রেরা পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। কেউ কেউ এখনো জানে না কবে আবার শুরু হবে তাদের স্বাভাবিক ক্লাস।

ছাত্রদের নয়, আন্দোলন সমাজের

এদিন ছাত্ররা জানিয়ে দেয়, আন্দোলন এখন আর কেবল কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়— এটা বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন। এদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল কবর জিয়ারত, আহতদের সহায়তা ও শোক মিছিল। তবে আরেকটি বার্তা ছিল স্পষ্ট— ‘রাষ্ট্র ব্যবস্থার অপরাধীদের অপসারণ চাই।’

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

২৫ জুলাই ২০২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর জুলাই বিপ্লব জুলাইয়ের দিনলিপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর