ঢাকা: নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য, সক্ষমতা সর্বোপরি ‘দুর্বল ভোটব্যাংক’ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকার পরও ইসলামিস্টরা এবার ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এক্ষেত্রে তারা ভরসা করছে ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’ ভোটে। তাদের ধারণা, বিগত দিনে ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’ ভোটে বিএনপি যেভাবে ক্ষমতায় গেছে, এবার ইসলামিস্টরা সেভাবে ক্ষমতায় যাবে। সব ইসলামী দল মিলে একটি ‘ভোটবাক্স’ দিতে পারলে তাদের জয় সুনিশ্চিত। কোনো কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে শতাধিক আসন নিয়ে সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদল হওয়ার ব্যাপারে তারা শতভাগ আশাবাদী।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইসলামিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের এ প্রত্যাশার কথা জানা গেছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামিস্টদের জন্য ‘ভালো একটা সুযোগ’ অপেক্ষা করছে বলে বিশ্বাস ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের।
ইসলামিস্টদের যুক্তি
ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ‘ধ্বজাধারী’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে থাকলে নৌকা ঠেকাতে এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটগুলো নির্দ্বিধায় ধানের শীষের বাক্সে যায়। সে কারণে সুষ্ঠু ভোট হলে পাঁচ বছর পর পর নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যে ক্ষমতার হাতবদল হয়। বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংকের সঙ্গে ‘এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট’ যোগ হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তাদের অসুবিধা হয় না। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনি জোট হলে এ কাজ আরও সহজ হয়ে যায়। কিন্তু, এবার আর সেই সুযোগ থাকছে না। মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’ ভোট এবার আর বিএনপির বাক্সে যাবে না।
ইসলামিস্টদের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার কওমি মাদরাসায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তা, অভিভাবক মিলে ৩০ লাখের কাছাকাছি মানুষ কওমি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরা মোটামুটি সবাই ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ ঠেকাতে এদের ভোট যেত বিএনপির বাক্সে। এবার আওয়ামী লীগ না থাকায় এদের বেশিরভাগ ভোট পাবে ইসলামিস্টরা।
সবাই মিলে একটি ‘ভোটবাক্স’ স্বপ্ন দেখাচ্ছে
আকিদাগত দ্বন্দ্বের কারণে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক জোট হওয়া নিয়ে যে সংশয় ছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। আওয়ামীশূন্য ভোটের মাঠ কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় তারা। এজন্য মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও ড. আহমেদ আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন ও মাওলানা জিয়াউল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামিক দল নিয়ে একটি জোট গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে তারা। ইসলামিস্টদের বিশ্বাস, নির্বাচনে একটি ‘ভোটবাক্স’ দিতে পারলে ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’ ভোটের বড় একটি অংশ তারা পাবে।
ইসলামিস্টদের ভোট কত পার্সেন্ট?
ইসলামিস্টরা ‘বড় স্বপ্ন’ দেখলেও তাদের ভোটের পার্সেন্টেজ সুখকর নয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং খেলাফত মজলিস- এ পাঁচটি দলই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত চারটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এরা কখনো এককভাবে, কখনো বিভিন্ন জোটের শরিক হিসেবে অংশ নেয়। কিন্ত, এদের মধ্যে জামায়াত ছাড়া বাকি চারটি দল এক শতাংশ ভোটও পায়নি।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পায়।
ইসলামী আন্দোলন ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ০.০১ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নমব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ০.৯৪ শতাংশ ভোট পায়। এসব নির্বাচনে খেলাফত মজসিল, জমিয়তে ইলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রাপ্ত ভোট শতাংশের হিসাবের মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি।
অতীতের এই ভোটের রেকর্ডকে এবার বদলে দিতে চায় ইসলামিস্টরা। তাদের বিশ্বাস ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় ‘এন্টি আওয়ামী লীগ’ ভোট তাদের বাক্সে পড়বে। এ ছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে, ‘ইসলামী জাগরণ’ সৃষ্টি হয়েছে, সেটির তোড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে।
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘‘মূলত, বিএনপির নিজস্ব ভোট ১৫ শতাংশ। বাকি যে ভোট তারা পায়, সেটা ‘এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট’। এই ভোট এবার ইসলামিস্টরা পাবে।’’
‘আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশা করছি। যারা আওয়ামী লীগ ঠেকাতে বিএনপিকে ভোট দিত, এবার তারা ইসলামিস্টদের ভোট দেবে। আমরা যদি ক্ষমতায় নাও যেতে পারি, শতাধিক আসন নিয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল হব’- বলেন গাজী আতাউর রহমান।