থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষের উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যাতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক বলে জানা গেছে।
তবে কাম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে কতজন হতাহত হয়েছেন সে বিষয়ে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। উভয় দেশই পরস্পরের ওপর সংঘর্ষের সূত্রপাতের অভিযোগ তুলেছে।
একাদশ শতকে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী দাংরেক পর্বতমালার উপরে অবস্থিত প্রাচীন খেমার সাম্রাজ্যের হিন্দু মন্দির ‘প্রাসাত তা মুয়েন থম’-কে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ২০০৮ সালে প্রাচীন হিন্দু মন্দিরটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য কাম্বোডিয়া আবেদন করলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে তাদের উত্তেজনা বাড়ে। থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া দুই দেশই মূলত মন্দিরটিকে তাদের নিজের বলে দাবি করে আসছিল। এসব সংঘাতে বাস্তুচ্যুত দুই দেশের সীমান্ত এলাকার ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
গত মে মাসে কাম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে। পরবর্তী সময়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশই তাদের সেনা সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আর ফলস্বরূপ সীমান্তে আমদানি-রফতানি ও ইন্টারনেট সংযোগ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।
থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে কাম্বোডিয়ান সেনারা সীমান্তে ড্রোন দিয়ে নজরদারি শুরু করে। এরপর রকেটচালিত গ্রেনেডসহ কাম্বোডিয়ান সেনারা সীমান্তে অবস্থান নিলে থাই সেনারা মৌখিকভাবে আলোচনার চেষ্টা করে, যা ব্যর্থ হয়। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে (স্থানীয় সময়) কাম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে গুলি শুরু হলে থাই সেনারা পালটা জবাব দেয়।
থাইল্যান্ড দাবি করেছে, কাম্বোডিয়া ভারী অস্ত্র, যেমন- বিএম-২১ (BM-21) রকেট লঞ্চার ও কামান দিয়ে সুরিন প্রদেশে হামলা চালিয়েছে। যার ফলে সীমান্তবর্তী থাই এলাকায় হাসপাতাল ও পেট্রোল স্টেশনসহ বহু স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে, কাম্বোডিয়া বলেছে, সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে যখন থাই সেনারা বৃহস্পতিবার ভোরে (স্থানীয় সময় ৬টা ৩০ মিনিটে) একটি প্রাচীন খমের-হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করে তার চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর চেষ্টা করে। এরপর থাই সেনারা ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি শুরু করে এবংগুলি চালায়। কাম্বোডিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোসিয়েতা অভিযোগ করেন, ‘থাই সেনারা আগে হামলা চালালে আমাদের আত্মরক্ষার জন্য জবাব দিতে বাধ্য হতে হয়।’
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আন্তর্জাতিক আইন মেনে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’
অন্যদিকে, কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, ‘কাম্বোডিয়া যুদ্ধ চায় না, তবে সশস্ত্র আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জবাব দিতে আমরা বাধ্য।’
যদিও সংঘর্ষ এখন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে, ব্রিটিশ ফরেন অফিস এরইমধ্যে ভ্রমণকারীদের প্রেহ ভিহেয়ার, তা কাই ও তা মুয়েন থম মন্দির এলাকার কাছাকাছি অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে, চীন তার নাগরিকদের থাই সীমান্তবর্তী এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে।