খুলনা: খুলনা মহানগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী সেতু পর্যন্ত সড়কের কাজ দ্রুত সম্পন্নের দাবিতে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ হাজারো এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি সাবেক কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল।
সংশ্লিষ্টদের প্রতি অবিলম্বে এই সড়কের কাজ সম্পন্নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই কাজের জন্য যদি কেউ চাঁদা চায় তাহলে এলাকাবাসীই তাদের প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ। এ কর্মসূচি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেন তিনি।
প্রধান অতিথি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন বলেন, খুলনা মহানগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত সড়কটি চার লেন করার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কের বড় বড় গর্তের মধ্যে পড়ে প্রায়ই যানবাহন উলটে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই অবস্থা বিরাজ করলেও কোন মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্টদের। নগরীর বান্দাবাজার, চানমারী বাজারসহ ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। রূপসা সেতু হয়ে নগরীর প্রবেশেরও অন্যতম সড়ক।
তিনি আরও বলেন, ভগ্নদশার কারণে ইজিবাইকসহ অন্য যানবাহন চালকেরাও সড়কটি এড়িয়ে চলছেন। খুলনা শিপইয়ার্ড ও বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, আধুনিক রাইস মিল ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ একাধিক কারখানা এই সড়কের দুই পাশে অবস্থিত। এ ছাড়া সেতুর আশপাশে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক কারখানা। এক সময় শহরের যানজট ও দূরত্ব এড়িয়ে সেতুতে যেতে ওই সড়ককেই বেছে নিতেন অধিকাংশ যানবাহনের চালক। এই সড়কটিতে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। চার বছর আগে এক গর্ভবতী নারী ইজিবাইকে করে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তা উলটে যায়। এতে গর্ভেই বাচ্চাটি মারা যায়। সড়কটি কোন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন তা সাধারণ মানুষ বুঝতে চান না, তাঁরা শুধু সড়কের কাজের শেষ চান।
৩১ নং ওয়ার্ডের আমীর নূর হুসাইন বাবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ এর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন লবণচরা থানা আমীর মো. মোজাফফর হোসেন, সাবেক থানা আমীর মোল্লা নাসির উদ্দীন, সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান জিকো, ছাত্রশিবির নেতা হাফেজ নাইম ইসলাম, শ্রমিক নেতা মো. সাখাওয়াত হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ওলামা বিভাগীয় সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা গাজী আল আমীন, বায়তুলমাল সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রহমান খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা জেলার প্রচার সম্পাদক মুফতি আশরাফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ৩১নং ওয়ার্ডের উপদেষ্টা ও ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা ফজলুল কাদের, জামায়াত নেতা ডা. মো. শাহজালালসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, এই সড়কটি চার লেন করার উদ্যোগ নেয় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২০১০ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়ে মাঝ পথে এসে থেমে গেছে। গত ১৫ বছর ধরে সড়কটি সংস্কারও করা হয়নি। ফলে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২০১০ সালে খুলনা মহানগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে শিপইয়ার্ডের সামনে দিয়ে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের প্রকল্প হাতে নেয় কেডিএ। নাম দেওয়া হয় ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’। ২০১৩ সালের মে মাসে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল।
প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক আকারও। ওই সময়ের ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। সে টাকাও ২০২২ সালের ২২ জুলাই সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) আওতাভুক্ত। তবে কেডিএ সেখানে প্রকল্প গ্রহণ করায় ২০১৩ সালে কেডিএকে সড়কটি ছেড়ে দেয় সিটি করপোরেশন। এ কারণে সিটি করপোরেশন ওই সড়ক সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে কেডিএর দাবি, প্রকল্পের মধ্যে শুধু চার লেনের সড়ক করার বরাদ্দ রয়েছে। সড়ক সংস্কারের জন্য সেখানে কোনো বরাদ্দ নেই। এ কারণে তারাও সড়কটি সংস্কার করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।