ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় আহমাদ ওয়াদুদ নামে একজন সাংবাদিককে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। ওই সাংবাদিকের কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। পরে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে সেখানেও ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দারা থানার সামনে মানববন্ধন করেছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ তিন সড়কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিকভাবে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা জানান।
ঘটনা শুনে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘আমি ওসি হয়েও এই কমদামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!’ আবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে এসআই জসিম বলেন, ‘ওখানে ছিনতাইকারীরা বসে থাকবে নাকি? আপনার কমন সেন্স নাই?’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি পোস্টও দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা পুলিশের ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও টাকাপয়সা নিয়ে যায় এবং চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। সৌভাগ্যবশত, তার স্ত্রী অক্ষত ছিলেন। ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী মোহাম্মদপুর থানায় যান। ডিউটি অফিসার এসআই জসিমের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনি প্রথমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং অভিযোগ লেখার লোক নেই বলে জানান। পরে ভুক্তভোগী নিজেই অভিযোগ লিখলেও তার কোনো কপি দেওয়া হয়নি। তাকে এএসআই আনারুলের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলা হয়, যিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারবেন।
ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের অনুরোধ জানালে এসআই জসিম তা সম্ভব নয় বলে জানান এবং ছিনতাইকারীদের ঘটনাস্থলে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওসি ইফতেখার হাসানের কক্ষে যান। ওসি তার দামী ফোন ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করেন এবং এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করতে বলেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৪০ মিনিট পর এএসআই আনারুল ও তার দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ভুক্তভোগী ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখিয়ে দিলেও, এএসআই আনারুল তাদের ধরতে এগিয়ে যাননি। পুলিশসহ তাদের দেখে ছিনতাইকারীরা ধীরে ধীরে সরে যায়। পরে এএসআই আনারুল ভুক্তভোগীকে জানান, রাতে অভিযান চালানো হবে। তাদের বাসায় চলে যেতে বলেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা ভুক্তভোগীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ এ বিষয়ে কঠোর। এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর থানার দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ‘ইতোমধ্যে এই ঘটনায় আমরা তদন্ত শুরু করেছি। বিষয়টি আমাদের সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তারা অবগত রয়েছে। আমরা ওই সাংবাদিকের মোবাইল উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আশা করি আপনাদের ভালো সংবাদ দিতে পারব।’
পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ছিনতাই হওয়া মোবাইলটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার আসামিরা হলেন— ইউসুফ (২৬), সিয়াম (২৩) ও জহুরুল (২২)।
অন্যদিকে সাংবাদিকের প্রতি পুলিশের হয়রানি এবং অসদাচারণের অভিযোগ এনে মোহাম্মদপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে থানার সামনে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন থেকে পুলিশের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে নানারকম হয়রানির অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।