ঢাকা: চলতি ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ। নীতিমালা অনুযায়ী এবারও তিনটি ধাপে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে অনলাইন আবেদন শুরু হবে আগামী ৩০ জুলাই। এ ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে ২০ আগস্ট।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-১ শাখার উপসচিব মো. আব্দুল কুদ্দুসের সই করা এক নীতিমালায় এ তথ্য জানানো হয়।
২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া:
বর্তমানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন করতে হয় অনলাইনে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd)-এ গিয়ে। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ পছন্দক্রম অনুযায়ী বেছে নিতে পারবেন। আবেদন করতে প্রয়োজন হবে এসএসসি রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পাসের সাল, শিক্ষা বোর্ডের নাম এবং একটি সচল মোবাইল নম্বর। আবেদন ফি প্রতিটি ফর্মের জন্য নির্ধারিত ২২০ টাকা। আবেদন শেষে শিক্ষার্থীদের কনফারমেশন কপি ডাউনলোড করে রাখতে হবে, এটি পরবর্তী ধাপে প্রয়োজন হবে।
মেধাক্রম ও নিশ্চয়ন প্রক্রিয়া:
ভর্তির আবেদন জমা দেওয়ার পর কয়েক ধাপে প্রকাশিত হবে মেধা তালিকা। প্রথম মেধাতালিকায় সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২২০ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকায়ও থাকবে সুযোগ তবে একধাপ মিস করলেই রয়েছে বাদ পড়ার আশঙ্কা। অনেকেই সময়মতো টাকা না দিয়ে তালিকা থেকে বাদ পড়ে যান, এটি এক মারাত্মক ভুল। তাই ওয়েবসাইট এবং মোবাইলে প্রাপ্ত এসএমএস নিয়মিতভাবে চেক করা অত্যন্ত জরুরি।
কোন বিভাগ বেছে নেবেন?
বিজ্ঞান বিভাগে যেতে হলে সাধারণত ৪.০০ বা তদূর্ধ্ব জিপিএ এবং গণিত ও বিজ্ঞানে ভালো ফলাফল থাকা প্রয়োজন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩.৫০ জিপিএ থাকলেই যথেষ্ট, আর মানবিক বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম জিপিএ থাকলেও ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে শুধু জিপিএ বা কলেজ নয় নিজের আগ্রহ, ভবিষ্যতের পেশা ও বিষয়ভিত্তিক দক্ষতাও বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। ভুল বিভাগ বেছে নিলে ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় বড় সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
কলেজ বাছাইয়ের সময় যা মাথায় রাখবেন:
একটি কলেজ কেবল ফলাফলের ভিত্তিতে ভালো হয় না। ভাবতে হবে আরও অনেক কিছু- বাসা থেকে দূরত্ব, শিক্ষক-শিক্ষিকার মান ও সংখ্যা, বিজ্ঞান ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, কুইজ ও বিতর্ক ক্লাব, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, কলেজের পরিবেশ, শৃঙ্খলা, টিউশন ফি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য।
ভর্তি ফি ও বৃত্তি:
সরকারি কলেজে ভর্তি ফি প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা। বেসরকারি কলেজে এটি ৮ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে অনেক ভালো বেসরকারি কলেজে স্কলারশিপ বা ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে, বিশেষ করে যারা ভালো ফলাফল করে তাদের জন্য।
যেসব কাগজপত্র লাগবে:
ভর্তি নিশ্চয়নের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাখতে হবে এসএসসি মার্কশিট ও সার্টিফিকেট (অনলাইন কপি চলবে), প্রবেশপত্র, ২–৪ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, অনলাইন আবেদন কনফারমেশন পত্র, শিক্ষার্থীর ও অভিভাবকের মোবাইল নম্বর।
সাধারণ ভুল ও করণীয়:
ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন, সময়মতো ভর্তি নিশ্চিত না করা, কলেজের সুযোগ-সুবিধা যাচাই না করে ভর্তি হওয়া কিংবা অন্যের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এসবই শিক্ষার্থীদের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ, সময়জ্ঞান ও পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা।
ভর্তির যোগ্যতা ও কোটা ব্যবস্থা:
দেশের যে কোনো শিক্ষা বোর্ড কিংবা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পূর্ববর্তী তিন বছরে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। বিদেশি বোর্ড থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমে সনদের মান নির্ধারণ করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের মোট ৯৩ শতাংশ আসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দফতরের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এসব কোটা পূরণ না হলে সেসব আসনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। এবারের ভর্তি কার্যক্রমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের জন্য কোনো কোটা রাখা হয়নি।
এদিকে, ভর্তির নীতিমালায় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মন্ত্রণালয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থাপনের অনুমতি আছে কিন্তু পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতি নেই, এমন কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। পাঠদানের প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত অথবা স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে অনুনোমোদিত ক্যাম্পাস এবং অনুনোমোদিত কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।