চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বিদেশি অপারেটর নিয়োগ করা হচ্ছে বলে আবারও নিশ্চিত করেছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তবে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে ‘অপপ্রচার’ বন্ধ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপারেটর দরকার জানিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কেবল পুরনো অপারেটরের পরিবর্তে নতুন অপারেটর নিয়োগ করতে যাচ্ছি। এর একমাত্র উদ্দেশ্য দক্ষতা বৃদ্ধি। কারণ, আমি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। আমার এতে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, এমনকি আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দাও নই।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের নিজস্ব বন্দর। এটি আমাদের সম্পদ এবং এটি আমাদের হাতেই থাকবে। কেউ যদি ভিন্নভাবে অপপ্রচার করে, আমি আশা করি তারা দেশের স্বার্থে আর এমনটি করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রবেশ করতে চাই। নিজেদের মধ্যে আটকে থাকতে চাই না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা আমাদের বন্দরগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছি। তবে আরও দক্ষতা অর্জনের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রবেশ করতে হবে। যখনই একটি আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগ করা হবে, তখনই একটি বন্দর আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রবেশ করতে পারবে।’
উল্লেখ্য চট্টগ্রাম বন্দরের প্রথম নির্মিত সবচেয়ে বড় কনটেইনার টার্মিনাল ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-এনসিটি’ পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি অপারেটরের কাছে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
আর এর বিরোধিতা করছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। সম্প্রতি বামপন্থী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচিও পালন করেছে।
এনসিটি গত প্রায় ১৭ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছিল সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। সরকার বিদেশি অপারেটর নিয়োগের আগপর্যন্ত এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সামরিক জাহাজ মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে, যেটি বন্দরের সীমানায় অবস্থিত। গত ৬ জুলাই থেকে ড্রাইডক কার্যক্রম শুরু করেছে। মূলত নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানেই এনসিটির কার্যক্রম চলছে।
ড্রাইডক দায়িত্ব নেওয়ার পর এনসিটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ গড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আগামীতে যে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ পাবে, তার অধীনে এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকবে।’
পরিদর্শনের সময় নৌ উপদেষ্টার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী এবং চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।