Saturday 26 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি রোববার: যারা হতে পারবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুলাই ২০২৫ ২৩:০৪

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোদমে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৭ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিবন্ধন পাওয়া সকল পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারি করেছে ইসি।

‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’ জারির পর, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী রোববার (২৭ জুলাই) পর্যবেক্ষকদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।

ইসির জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আগ্রহী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে ১৫ দিনের সময় দেওয়া হবে তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। এই সময়ের মধ্যে নতুন ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৫’-এর আলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর, যোগ্য সংস্থাগুলোকে পাঁচ বছরের জন্য নিবন্ধন প্রদান করবে ইসি।

বিজ্ঞাপন

নতুন নীতিমালায় পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্যতা ও শর্তাবলী:

পর্যবেক্ষককে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। পর্যবেক্ষকদের বয়স ২১ (একুশ) বছর বা তদূর্ধ্ব হতে হবে। পূর্বের নীতিমালায় এই বয়সসীমা ছিল ২৫ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে; এখন ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। যা আগে এসএসসি ছিল। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো ৩ (তিন) দিনের জন্য (নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচনের পরের দিন) পর্যবেক্ষক মোতায়েন করতে পারবে।

এছাড়া নীতিমালায়, যারা নির্বাচন-প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, রাজনৈতিক দল বা দলের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রাখেন, তাদেরকে পর্যবেক্ষক হতে দেওয়া যাবে না।

পর্যবেক্ষক নিবন্ধন

নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনকৃত পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে মুদ্রিত ‘পর্যবেক্ষক পরিচয়পত্র’ প্রদান করা হবে, যা সবার কাছে দৃশ্যমান রাখতে হবে এবং অন্য কারও কাছে হস্তান্তরযোগ্য নয়। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দফতর থেকে নিতে হবে।

এছাড়া প্রতিটি নির্বাচনি এলাকা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে তাদের পর্যবেক্ষকদের তালিকা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে এবং সেই তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও দেখাতে হবে, যাতে তাদের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

পর্যবেক্ষকদের দায়িত্ব

পর্যবেক্ষক মোতায়েনের একক ইউনিট হবে উপজেলা, মেট্রোপলিটন থানা অথবা সংসদীয় নির্বাচনি এলাকা। একই এলাকার জন্য একাধিক সংস্থা আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কে কোথায় মোতায়েন হবে।

প্রতিটি সংস্থা সর্বোচ্চ পাঁচজন করে ভ্রাম্যমাণ পর্যবেক্ষক দল রাখতে পারবে, যারা ভোটকেন্দ্রে স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে। ভোট গণনার সময় প্রতিটি ইউনিটে একজন করে পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন, যারা ভোট গণনা ও ফলাফল একত্রিতকরণের পুরো প্রক্রিয়া নজরে রাখবেন। ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা গণনাকক্ষ ত্যাগ করতে পারবেন না।

পর্যবেক্ষকদের আচরণবিধি

* ভোটারের গোপন ভোট প্রদানের অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজ নির্বিঘ্ন করতে হবে। তাদের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ।

* গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।

* পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে আচরণ, নির্বাচন উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ, কোনো উপহার গ্রহণ বা সুবিধা নেওয়া নিষিদ্ধ। মিডিয়ার সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার সম্ভাবনা থাকা মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।

* পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা রক্ষা ও কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার। কোনো পর্যবেক্ষক স্বার্থের সংঘাত বা অন্য অসঙ্গত আচরণ করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অবহিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিধান

আইন অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের সাত দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এরপর ভোটগ্রহণ শেষে এক মাসের মধ্যে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের সামগ্রিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার সুপারিশ থাকে।

আইনি বিষয়

কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি। কমিশনের অনুমতি ছাড়াই এই নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন বা সংশোধনী করা যাবে না। এছাড়া বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য এই নীতিমালার বেশির ভাগ শর্ত প্রযোজ্য নয়। কমিশন যেকোনো সময় নীতিমালায় সংযোজন বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক

এদিকে, দেশে পর্যবেক্ষকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যম নীতিমালা-২০২৫ জারি করেছে ইসি। নতুন এ নীতিমালায়, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম অনুমোদনে সরকার নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। তবে তাদের তথ্য যাচাই করে দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এই নীতিমালার ফলে বিদেশ থেকে ভাড়া করে পর্যবেক্ষক আনার প্রক্রিয়া রোধ হয়ে যাবে। কেননা, আগের নীতিমালা অনুযায়ী, সরকার ভোটের বৈধতা পেতে ইচ্ছা করলে তার পছন্দের পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিতে পারতো। আবার ভালো পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন নাও দিতে পারতো। নতুন নীতিমালায় সেই সুযোগ আর নেই।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষক হতে হলে নির্বাচনি অভিজ্ঞতা, মানবাধিকার, সুশাসন বা গণতন্ত্র নিয়ে কাজের পটভূমি থাকতে হবে। সংস্থাটি নিজ দেশে নিবন্ধিত হতে হবে। আবেদনকারীকে জালিয়াতি বা কোনো অপরাধে দণ্ডিত না হওয়াও শর্ত। আবেদন করতে হবে ইসির নোটিশের ৩০ দিনের মধ্যে। ই-মেইল, ফ্যাক্স বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে।

ইসি বাছাই করে আবেদন পাঠাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় যথাযথ কারণ ছাড়া ভিসা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।

তবে বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিদেশি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্মচারীরা যথাক্রমে বিদেশি ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে আবেদন ও নিবন্ধন করতে হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা আলাদা হলেও উভয়েরই নিয়মনীতির অধীন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

এদিকে, নতুন নীতিমালায় তৎকালীন ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক ও আশঙ্কা রয়েছে, এই নীতিমালা নির্বাচনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

পর্যবেক্ষক ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান সারাবাংলাকে বলেন, পর্যবেক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আগে এসএসসি পাস পর্যন্ত ছিল, সেটা বাড়ানো ইতিবাচ। তবে এটি আরও একটু বেশি বাড়ানো ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলিম ইসি’র গত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, কোমোশন যেসব পরিবর্তন এনেছে তা ইতিবাচক। এতে দলীয়করণ কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। সেসঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক ও আশঙ্কা রয়েছে, এই নীতিমালা নির্বাচনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বড় পদক্ষেপ বলে মনে করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলিম।

সারাবাংলা/এনএল/এসআর

ইসি গণবিজ্ঞপ্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক শ জাতীয় সংসদ নির্বাচন