ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বরের ডা. আজমল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি নারী ও তার অনাগত সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। স্বামী আব্দুর রহমানের অভিযোগ, সিজার হওয়ার আগেই ইনজেকশন দিয়ে স্ত্রী আইরিন ও তার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে প্রসূতি আইরিন ও তার গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়।
নিহত আইরিন ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুর রহমানের স্ত্রী।
নিহতের স্বামী আব্দুর রহমান ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। মিরপুর-৬ এ স্ত্রী আইরিনসহ ভাড়া বাসায় থাকতেন।
চার বছর আগে আইরিনকে বিয়ে করেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাদের কোল জুড়ে সন্তান আসার দিন ছিল আজ।
সকালে স্ত্রীকে সিজারের জন্য মিরপুর-৬ নম্বরের ডা. আজমল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সিজার হওয়ার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রাণ হারান আইরিন ও তার অনাগত সন্তান।
আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিজারের জন্য সকালে আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর এখন, স্ত্রী ও আমার অনাগত সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। এই মুহূর্তে আমার সন্তানকে নিয়ে আনন্দে থাকার কথা ছিল। এই সবকিছুর জন্য ওই হাসপাতাল এবং ডাক্তার-নার্সরাই দায়ী। সিজার হলো না, অথচ আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলা হলো। আমি আমার সন্তানের মুখও দেখতে পারলাম না; পেটের মধ্যেই মারা গেল।’
জানা গেছে, আইরিনের গর্ভাবস্থার বয়স ছিল ৯ মাসেরও বেশি। এসময় সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। দুই দিন আগে তিনি ডাক্তার হাজেরা খাতুনকে দেখান। ডাক্তার আজমল হাসপাতালে সকাল ৮টায় সিজার করানোর কথা বলে আইরিনকে ভর্তি হতে বলেন। সেই অনুযায়ী, সকাল ৬টার দিকে আইরিনকে ৬০৩ নম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার সকাল ৮টার দিকে সিজার করবেন জানিয়েছেন।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আইরিনকে সিজারের জন্য প্রস্তুত করতে ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং সঙ্গে স্যালাইনও লাগানো হয়। কিছুক্ষণ পরই আইরিনের পালস জিরোতে নেমে আসে। রোগীর স্বজনদের কিছু না জানিয়েই তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর সেখান থেকেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আব্দুর রহমানের অভিযোগ করে বলেন, ‘আজমল হাসপাতালের ভুল চিকিৎসা দিয়ে কেড়ে নিল আমার স্ত্রী-সন্তানের প্রাণ।’ তিনি এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার দাবি করছেন।
স্বজনদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন, ইনজেকশন দেওয়ার কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সঙ্গে পেটে থাকা সন্তানও মারা গেছে। এরপর পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে।
প্রসূতি ও গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছে, যেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘হাসপাতালের অবহেলা’ উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন আব্দুর রহমানের বন্ধু শাহাব উদ্দিন শিপন। তিনি বলেন, “অবহেলায় দুটি প্রাণ শেষ হয়ে গেল, অথচ তাদের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এক পর্যায়ে তারা ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। যখন পুলিশ আসে, তখন মামলায় না যেতে ১০ লাখ টাকা দিতে চায়।” এ সময় আব্দুর রহমান তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যেখানে আমার স্ত্রী-সন্তানকে হারালাম, সেখানে এই টাকা নিয়ে কী করবো?”
তিনি আরও জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মরদেহ নিয়ে যাচ্ছেন দাফন করতে। দাফন শেষে ঢাকায় ফিরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক আতাহার আলীকে ফোন করা হলে তিনি সরাসরি কথা বলার জন্য হাসপাতালে ডাকেন। ফোনে তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না বলেও জানান।
হাসপাতালের ম্যানেজার আবুল খায়ের জানান, ‘ঘটনা যা ঘটেছে তা তো ঘটেই গেছে। এখন তিনি সমাধানের প্রয়োজন।’
মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাজ্জাদ রোমন জানান, ‘আজমল হাসপাতালে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ গিয়েছিল। ভুক্তভোগীর পরিবার দাফন-কাফনের জন্য গ্রামে গেছে। ফিরে এসে মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নামে-বেনামে গড়ে ওঠা হাসপাতালগুলোতে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ যেন এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত তদারকির অভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এই হাসপাতালগুলো অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের দাবি, এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।