ঢাবি: অন্তর্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সবার আগে ফিক্স করা দরকার রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ। আগে এই তিনটা অঙ্গের সমস্যার সমাধান করতে হবে। এখানে সমস্যা রেখে তথ্য কমিশন করে, হিউম্যান রাইটস কমিশন করে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে আসলে কোনো লাভ হবে না।
শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস সার্পোট সোসাইটির’ উদ্যোগে আয়োজিত ‘১১তম মানবাধিকার সম্মেলন-২০২৫’ এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মানবাধিকার সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, এটা শুধু আইন দিয়ে হবে না। সবার উপলব্ধি লাগবে, আত্মশুদ্ধি লাগবে, আমাদের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বচ্ছতা লাগবে। আমাদের সবচেয়ে আগে আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। এগুলির সাথে সাথে যখন আমরা আইনি পরিবর্তন করবো, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করবো, তখন একটা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসতে পারে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছিলেন, পার্বত্য অঞ্চলে জন্য কাজ করছিলেন এই জন্যই মাইকেল চাকমাকে তুলে নেওয়া হলো। আইনগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েও তুলে নেওয়া হয়েছিল। জুলাই অভ্যুত্থানেও নাগরিক তার অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামার কারণে অনেকেই জীবন দিতে হয়েছে। কাউকে চোখ হারাতে হয়েছে, কাউকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কঠিন দায়িত্ব। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় ১৩০০ এর বেশি নাগরিকদের প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১৮০ জন নিহত হয়েছে। এক বছরে প্রায় আড়াই হাজার জনের প্রাণ হাড়াতে হয়েছে জুলাই ও জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে। জুলাইয়ে যাদের প্রাণহানী ঘটেছে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘আমাদের একাত্তরের পর চব্বিশে এসেছে। বই থেকে বেড়িয়ে এসে কাজে বাস্তবায়ন করতে হবে। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিল সেগুলো খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে।’
গুমের শিকার মাইকেল চাকমা বলেন, ‘আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে পৃথিবীর আলো দেখতে পারব। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ছিল আমার জীবনের ভয়াবহ দিন যেদিন আমার জীবনের আলো নিভে গিয়েছিল। আমি যখন কল্যাণপুরে একটি কাজে যাই সেখানে কিছু লোক আমাকে ঘিরে ধরে একটি গাড়িতে তোলে। তারপর চোখ বেঁধে দেয় তারা আমার। যখন চোখ খোলা হলো তখন আমার চারদিকে ছিল দেওয়াল। দুনিয়ার কেউ জানে না আমি কোথায় আছি, বেঁচে আছে কিনা মরে গেছি। প্রায় সাড়ে ৫ বছর অন্ধকারে কেটে গেলো। প্রতিটি দিন ছিল একেকটা বছরের মতো লম্বা।
তিনি আরও বলেন, আমাকে তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবার, মানবাধিকার কর্মীসহ অনেকে আমার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছে। এক পর্যায়ে আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মারা যায়। তারা একসময় আমারো শেষকৃত্য করে নেয়। একটা পরিবার কতটুকু আশাহীন হলে শেষকৃত্য করে নেয়।
শহিদ নূরের বোন আফরিন আমান বলেন, আমার ছোট ভাই নূরের বয়স ১৩ বছর। সে কী রাজনীতি বুঝতো? সে শুধু বুক ভরা সাহস আর হাতে পতাকা নিয়ে সে রাস্তায় নেমেছিল। সে বলতো অনেক বড় হবে। সে বলতো আমাকে মানুষ এমনভাবে চিনবে যেন তোমরা আমার পরিচয় সবার সামনে দিতে পারো। তাকে এখন সবাই চিনে তবে একজন শহিদ হিসেবে।