কোটা আন্দোলনের নেতা ফারুকসহ তিনজন কারাগারে
৩ জুলাই ২০১৮ ১৭:২৭
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনসহ তিনজনকে কারাগারে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ জুলাই) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সুব্রত ঘোস শুভ তাদের কারাগারে নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। তারা হলেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক (২৪), তরিকুল ইসলাম (২২), জসিম উদ্দিন (২১)।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখতে আবেদন করেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাদী হয়ে ১০ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য ও শাহবাগ থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরো তিনটি মামলা দায়ের করেন। এই চার মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ এপ্রিল রাত ১টার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনের মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং নাশকতা চালায়। তাদের হাতে রড, হকিস্টিক, লাঠি ও বাঁশ ছিল। বাসভবনের আশপাশেও একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
এর আগে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৮ এপ্রিল শাহবাগে অবস্থান নেন চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ঢাবি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রাতে আন্দোলনের সময় ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনে হামলা হয়।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের সাথে সরকার পরদিন বৈঠক করবে বলে ওই রাতেই জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। পরদিন সরকারদলীয় সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠকে বসেন। এ সময় সরকারের কাছ থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। তবে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা স্বাগত জানিয়ে এ বিষয়ে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় তারা ফের আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এর মধ্যে ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে জানান, কোটা নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তার এই বক্তব্যের জের ধরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ৯ মে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। ১০ মে’র মধ্যে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে ১৩ মে থেকে সারাদেশের সব স্কুল-কলেজে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন তারা। তবে ওই দিনই (৯ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণা দিলে আন্দোলনকারীরা অপেক্ষা করতে থাকেন।
এরপর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কোটা সংস্কার নিয়ে কোনো সরকারি কমিটি গঠন হয়নি। পরে কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানাতে ৩০ জুন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় ছাত্র অধিকার সমন্বয় পরিষদ। তবে সংবাদ সম্মেলনের আগেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল্লাহ নূরুসহ সাত শিক্ষার্থী আহত হন।
এর মধ্যে রোববার (১ জুলাই) ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে। পরে সোমবার (২ জুলাই) পতাকা মিছিল ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করতে গেলেও ছাত্রলীগের বেধড়ক মারধরের শিকার হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের ঘটনাও ঘটে।
সারাবাংলা/এআই/এটি
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook